জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ডঃ শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় ৭ দফা (০১.জুলাই শহীদ ও আহতদের পরিবারকে পূনর্বাসন,০২.পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন,০৩.দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন,০৪.শাসনতন্ত্রের মৌলিক সংস্কার,০৫.লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড,০৬.বিচার ও সংস্কার,০৭.প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থাকরণ) দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডঃ শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই শহীদদের পরিবার ও আহতদের পরিবারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ টিকে থাকবে এবং জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব থাকবে ততদিন পর্যন্ত শহীদদের পরিবারের পাশে থাকার তৌফিক যেনো আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দান করেন।
জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন,২৪ শের জুলাইয়ে যারা গুলির মুখে বুক পেতে দিলো তাদের ত্যাগ ও কুরবানীর কারণেই আজকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যাদের সাহসিকতা ও ত্যাগের কারণে আমরা মুক্তির স্বাদ পেয়েছি তাদেরকে যেনো শিশু বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করি। যাদের ত্যাগের কারণে আমরা মুক্তির এই নেয়ামত পেয়েছি তাদেরকে যেনো অবজ্ঞা ও অবহেলা না করি, অহংকার করে যেনো তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করি, রাজনীতির শিষ্টাচার যেনো রক্ষা করি, অরাজনৈতিক ভাষায় যেনো কথা না বলি। তাদেরকে নিয়ে আমরা যেনো জাতীয় ঐক্যের বীজ তলা প্রস্তুত করতে পারি।যদি এইগুলো আমরা পরিহার করতে না পারি তাহলে আমরা ধরে নিবো যারা পারবেনা তাদের অন্তরে নতুন ফ্যাসিবাদের বাসা বেঁধেছে।গত সাড়ে ষোল বছর যারা জালিমের জুলুমের শিকার হয়ে তিলে তিলে মৃত্যু বরন করেছেন,কারাবরণ করেছেন, অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিয়েছেন তাদের কাছে আমরা গভীরভাবে ঋণী।
আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে ?এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমি বলবো আরেকটা লড়াই হবে, ইনশাআল্লাহ।একটি লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটি লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ।তারুণ্য ও যৌবনের শক্তিকে একত্রিত করে সেই যুদ্ধে আমরাই বিজয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ। বক্তব্যের এ পর্যায়ে এসে জামায়াতের আমীর ক্ষণিকের জন্য মুর্ছা যান।
তারপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে বক্তব্য শুরু করেন,আমি বলেছি দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ আমরা সবাইকে নিয়ে গঠন করতে চাই। আমরা কথা দিচ্ছি- জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর মেহেরবানী ও জনগণের সমর্থনে সরকার গঠনে সমর্থ হয় -এই কথা বলে তিনি দ্বিতীয় বার মুর্ছা যান। তারপর তিনি বসে বসেই বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা যতদিন হায়াত দিয়েছেন ততদিন জনগণের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।বাংলার মানুষের পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর দয়ায় ও জনগণের সমর্থন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করতে পারলে আমরা দেশের মালিক নয়,সেবক হবো। চাঁদা আমরা নিবো না, দুর্নীতি আমরা করবো না। চাঁদা আমরা নিতে দিবো না, দুর্নীতি আমরা করতে দিবো না। ভবিষ্যতে যারা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এমপি নির্বাচিত হবেন ও মন্ত্রী হবেন তাদের প্রতি আমার নির্দেশ রইলো-আপনারা সরকারি প্লট নিবেন না, ট্যাক্স ফ্রি গাড়িতে চড়বেন না, এবং সরকারি উন্নয়ন কাজের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন।
তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, জামায়াতের আমির হিসাবে এখানে কথা বলতে দাঁড়াই নাই,১৮ কোটি মানুষের একজন হয়ে কথা বলতে দাঁড়িয়েছি। আমি শিশুদের কাছে একজন বন্ধু, যুবকের কাছে ভাই আর বয়স্কদের কাছে আমি সহযোদ্ধা।।সারা জীবন জেল জুলুমের পরোয়া করি নাই, রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করেছি। আমার আফসোস ২৪ সালে জাতিকে মুক্তি দিতে গিয়ে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হলো আমি তাদের একজন হতে পারলাম না। আপনাদের কাছে দোয়া চাই- ইনসাফের ভিত্তিতে একটি দেশ গঠনের জন্য যে লড়াই হবে, আল্লাহ যেনো আমাকে সেই লড়াইয়ের একজন শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,২০০৬ সালের অক্টোবরের ২৮ তারিখে পল্টনের গণহত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, সারাদেশের গণহত্যা, পিলখানায় গণহত্যা এবং জুলাইয়ের গণহত্যার বিচার দেশে নিশ্চিত করতে হবে। এইসব গণহত্যা যারা করেছে তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পূরণো ব্যাবস্থায় বাংলাদেশ চলবে না। এতগুলো মানুষ এমনি এমনি জীবন দেয় নাই,জীবন দিয়েছে জাতির মু্ক্তির জন্য। স্পষ্ট কথা হলো-পুরাণা ব্যবস্থার সবকিছুই যদি টিকে থাকবে তাহলে এতগুলো মানুষ কেনো জীবন দিলো ? যারা বস্তাপচা জীবন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায় তাদেরকে আমরা বলবো যারা জীবন দিয়েছে আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দিন।
যদি শক্তি থাকে ফেরত এনে দিন।জানি পারবেন না। যেহেতু পারবেন না তাই নতুন ব্যবস্থাপনায় নতুন বাংলাদেশ গঠনে করতে হবে।
সবশেষে তিনি বলেন, শিশু-কিশোর,যুবক,বৃদ্ধ,মা-বোন, শ্রমিক, কৃষক,ব্যবসায়ী ও জনতা সবাইকে যেই দেশ,যেই রাষ্ট্র,যেই সংবিধান নিরাপত্তা দিতে পারবে আমরা সেই বাংলাদেশ গঠন করতে চাই।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, নায়েবে আমীর ডাঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের,নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা মুজিবর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ,খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডাঃ আহমেদ আব্দুল কাদের,গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর,এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন,মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনপিপির চেয়ারম্যান কাজী আবু তাহের,বিএসপির সভাপতি আব্দুল কাদের জিলানী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টির চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ শামীম,পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ মাহমুদ লিটন,ন্যাশনাল জমায়েত পার্টির মুখপাত্র শরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদিক, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান,আমজনতা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, ডঃ ফয়জুল হক, মাওলানা মুফতী আমির হামজা, শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মোঃ বরকতউল্লাহ, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।