কুষ্টিয়া কুমারগাড়া বিসিক শিল্প নগরীতে বিআরবি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এমআরএস ও কিয়াম মেটালের কারখানা শ্রমিকদের বেতন ভাতাদিসহ আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে বিদ্যমান বৈষম্য দুরীকরনে ১০ দফা দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ চরম সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি না মানায় গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া চলমান আন্দোলনরত শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকাল থেকেই কারখানা চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশসহ হৈ হট্টগোলো লিপ্ত হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ র্যাবসহ আইন শৃংখলা বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন। এবিষয়ে আইন শৃংখলা বাহিনী বা কারখানা কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিআরবি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দ্বীপেন কুমার দাস দাবি করেন, উদ্ভুত উত্তপ্ত পরিস্থিতি এখন সম্পূর্নরূপে শান্ত হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। কিয়াম মেটালের শ্রমিক মিনারুলের অভিযোগ, ‘আমরা এখানে সবাই শ্রমিক, আমারদের রক্তঘামের টাকায় শুধু কিয়াম মেটাল নয়; গোটা বিআরবি গ্রুপ আজ আকাশ ছোয়া প্রতিষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু আমাদের কেউ বিআরবিতে দেয়া কুনো সুযুগ সুবিধা কিয়াম মেটালে দেয়া হয়না। এক জাগায় দুই নীতি কেনো ? ওখানকার শ্রমিকও চাকরিতে ঢুকার সুমায় যে কন্ডিশনে ঢুকেচে আমরাও সেই কন্ডিশনে ঢুকিচি, তালি আমরা কেনো এই বৈষম্য মাইনি লেবো’ ? আমাদের মোষের মতো খাটাবি আর যে ট্যাকা বেতন দেয় তাতে আমাদের সংসার চলেনা। কোমের পক্ষে বিশ হাজার টাকার বেতন দিয়ে শুরু করতে হবে’। অপর শ্রমিক আসাদুলের অভিযোগ কারখানায় কর্মরত অবস্থায় কোন শ্রমিক আহত হলি অফিসাররা কেউ আমাদের খোঁজও নেয় না। কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি ভাতাও দেয়া হয় না’। এমআরএস-এর শ্রমিক সুজনের অভিযোগ, ‘আমাদের খাটাবে ১২ ঘুন্টা আর বেতন দেয় ৮ঘুন্টা। তালি আমরা কেনো ওভার টাইম করবো ? ১২ ঘুন্টা ডিউটি না, ৮ঘুন্টা ডিউটি করতি হবে’। অপর শ্রমিক আসাদুলের অভিযোগ এখানে এক্সিডেন্টে আহত হয়ে কাজে আসতে না পারলি, চাকরীও নাই টাকাও নাই। এমনকি চাকরীত ঢুকার সময় আমাদের কাছ থেকে যে সিকিউরিটির ট্যাকা জুমা লেই সেই টেকাও ফেরত দেয়না’। বিআরবি গ্রুপের সব কারখানায় একই রকম বেতন ভাতাসহ সুযুগ সুবিদা দিতি হবে’। কুমারগাড়া বিসিক শিল্প নগরীতে কারখানা শ্রমিক অসন্তোষের সত্যতা নিশ্চিত করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক ফরহাদ ওহাব বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের গোয়ার্তুমি ও অদুরদর্শিতার কারনে বিআরবি গ্রুপের সব কয়টি কারখানা শ্রমিকদের মধ্যেই অসন্তোষ রয়েছে। অসংখ্য শ্রমিকরা নানা অভিযোগ নিয়ে আমাদের এখানে প্রতিকার চেয়ে ধর্না দেন। কখনও কিছু কিছু ঘটনা কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা করে দেয়া সম্ভব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমস্যা সমাধানে কারখানা কর্তৃপক্ষ আন্তরিক না হওয়ায় সম্ভব হয়নি’। এবিষয়ে বক্তব্য জানতে বিআরবি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক দীপন কুমার দাসের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, ‘এখন কোন সমস্যা নেই। শ্রমিকরা এখন শান্ত। বাইরে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করছেন। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিআরবি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এমআরএস এবং কিয়াম মেটালের কারখানা শ্রমিরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সকাল থেকে কুষ্টিয়া ঝিনাইদাহ মহাসড়রক অবরোধ করে রাখে। সংবাদ পেয়ে পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। ওখানে শ্রমিকদের মধ্যে লাঠিসোটা নিয়ে হট্টগোলের ঘটনাও ঘটেছিলো। তবে এবিষয়ে এখনও কেউ কোন লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
কুষ্টিয়ায় বিআরবি গ্রুপের শ্রমিক অসন্তোষ; দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভের বিস্ফোরন



