বৈশাখ থেকে শ্রাবণ চার মাসের বর্ষা মৌসুম নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষক ও জেলেদের জন্য হয়ে উঠেছে এক নিস্তারহীন মৃত্যুর সময়

বৈশাখ থেকে শ্রাবণ চার মাসের বর্ষা মৌসুম নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষক ও জেলেদের জন্য হয়ে উঠেছে এক নিস্তারহীন মৃত্যুর সময়। প্রতিবছরের মতো এবারও বজ্রপাত কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ। দিগন্তজোড়া কালো মেঘ, হঠাৎ ঝড় আর বজ্রপাত ছড়িয়ে দিচ্ছে শোকের ছায়া হাওরের ঘরে ঘরে।

জেলার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, কলমাকান্দা ও কেন্দুয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে বজ্রপাতে প্রাণ গেছে অন্তত ১০ জনের। এর মধ্যে খালিয়াজুরী ও মোহনগঞ্জে ৩ জন করে, মদন, সদর, কলমাকান্দা ও কেন্দুয়ায় ১ জন করে মারা গেছেন।

গত ২৮ এপ্রিল মদন উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামে মাদরাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতে মারা যায় ৯ বছরের শিশু আরাফাত। একই দিনে কলমাকান্দার দিদারুল ইসলাম নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষক বজ্রপাতে প্রাণ হারান গোবিন্দপুর বাজারে যাওয়ার সময়।

শোকগ্রস্ত আরাফাতের বাবা-মা বলেন, প্রতি বছর এমন ঘটনা ঘটছে, অথচ স্থায়ী কোনো সমাধান নেই। হাওরে যদি বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকত, হয়তো আমাদের সন্তান আজ বেঁচে থাকত।”

এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ টি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় হাওর এলাকায় তাল ও কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাওরাঞ্চলে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় অবিলম্বে প্রযুক্তিনির্ভর আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, বজ্রসচেতনতা বাড়ানো, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং বজ্র নিরোধক অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।

হাওরবাসীর আকুতি এই মৃত্যুর মিছিল যেন আর না বাড়ে। তারা চান, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক, হাওর হোক বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ।