জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বাগেরহাট সদর হাসপাতালে জনবল সংকটে মারাত্মকভাবে ভুগছে জেলার সাধারণ মানুষ। চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে প্রতিদিনই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার রোগী। অনেকেই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে খুলনা বা ঢাকায়, যেখানে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে।
সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও পরিবর্তন আসেনি চিকিৎসা সেবায়। হাসপাতালের জনবল কাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৮ জন সিনিয়র কনসালট্যান্টের বিপরীতে আছেন মাত্র ২ জন। ৩০ জন মেডিক্যাল অফিসারের পদ থাকলেও আছেন ১৫ জন। নার্স, ক্লিনার, কুক, ইলেক্ট্রিশিয়ান, পাম্প অপারেটরসহ অন্যান্য পদে রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিযুক্ত ৬৬ জনের অধিকাংশই দলীয় প্রভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত জানুয়ারি থেকে আইসিইউ ইউনিট বন্ধ রয়েছে। নেই সিটি স্ক্যান বা এমআরআই মেশিন। মাত্র একজন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও একজন সার্জনের ওপর নির্ভর করতে হয় পুরো অস্ত্রোপচারের কাজ।
স্থানীয় রোগীদের অভিযোগ, এই অবস্থায় চিকিৎসা পেতে গিয়ে তাদের বাইরে যেতে হচ্ছে। শহরতলীর চরগা গ্রামের শিরিন, রুনু বেগম, কাজল, হায়দারসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বড় হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা নিতে খুলনা কিংবা প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
হাসপাতালটির নতুন ভবন নির্মিত হয় ২০১৮ সালে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। ২০২২ সালে তা চালু হলেও বাড়েনি জনবল। ফলে বেড়েছে রোগীর ভোগান্তি। অধিকাংশ কনসালট্যান্ট ঢাকায় পরিবার রেখে চলায় নিয়মিত অনুপস্থিত থাকেন, কেউ কেউ এক মাস পর্যন্ত ছুটিতে থাকেন। অনেকে আবার প্রাইভেট চেম্বারে ব্যস্ত থাকেন।
হাসপাতালের বাইরে দালালচক্রও সক্রিয়, যারা রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ফায়দা লুটছে। এতে রোগীরা চিকিৎসা ব্যয়ের চাপে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
চোখ, মেডিসিন ও কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় সংকট আরও প্রকট। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ এবং জরুরি বিভাগে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন, যা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অল্প সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স।
হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশও করুণ। ড্রেন ও টয়লেট অপরিষ্কার, মশা-মাছির উৎপাত ও দুর্গন্ধে অসহনীয় অবস্থায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম সমাদ্দার বলেন, "বারবার চিঠি দিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছি না। রোগীদের রোষানলের শিকার হচ্ছি আমরাই। চাহিদা অনুযায়ী জনবল পেলে জীবনের শেষ সময়ে কিছু ভালো কাজ করতে পারতাম।"
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবুল আলম জানান, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে এবং সরকার ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ভাবছে।
এদিকে বাগেরহাটের কৃতি সন্তান, সিনিয়র সচিব ড. ফরিদুল ইসলাম বাবলু জানান, স্বাস্থ্য সচিব ও উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং অচিরেই হাসপাতালের সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।