পটুয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা কলাপাড়ায় বিচারক সংকটে থমকে আছে দুইটি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম। কলাপাড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বর্তমানে ১০ হাজারেরও বেশি মামলা ঝুলে আছে। বিগত ৪ জুন ২০২৫ তারিখে দুইজন বিচারক বদলি হওয়ার পর এখনো নতুন বিচারক যোগদান না করায় সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
এ অবস্থায় বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচারের আশা যেন দিনকে দিন আরও দূরে সরে যাচ্ছে। কলাপাড়া থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালী জেলা আদালতে যাতায়াত করে মামলার কার্যক্রম চালানো গরিব ও সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এক দুঃসহ বোঝা।
বিচারপ্রার্থীদের অসহায় চিত্র:
মামলার হাজিরা বা কার্যক্রমের জন্য পটুয়াখালী আদালতে যেতে প্রতিবারই গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত সময়, অর্থ ও শ্রম। কলাপাড়ার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা দিনমজুরি বা ক্ষুদ্র ব্যবসায় জীবন চালায়, তাদের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও একটি দেওয়ানি মামলার বাদী মোঃ শহীদ আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে বারবার পটুয়াখালী যাতায়াত করা সম্ভব না। এখানে বিচারক না থাকায় আমাদের মামলা ঝুলে আছে। ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই।”
আইনজীবী নেতৃবৃন্দের উদ্বেগ:
কলাপাড়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন আদালতে বিচারক না থাকায় সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মামলার জট ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এতে শুধু ভুক্তভোগীরা নয়, পুরো এলাকার বিচার ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে।”
এ বিষয়ে কলাপাড়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বলেন,“আমরা কলাপাড়া বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোনো বিচারক না আসায় জনগণের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। দ্রুত নতুন বিচারক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি, যাতে এ অঞ্চলের বিচারপ্রার্থীরা স্বাভাবিক ও দ্রুত ন্যায়বিচার পেতে পারেন।”
বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে মানুষ:
স্থানীয় সচেতন মহলের আশঙ্কা, এভাবে দীর্ঘদিন বিচারক শুন্য থাকলে সাধারণ মানুষ আইন ও বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারাতে পারে। অনেকে হয়রানি ও কষ্টের ভয়ে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
বর্তমানে কলাপাড়ায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলে প্রায় ১০ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে জমি সংক্রান্ত, পারিবারিক, নারী ও শিশু নির্যাতন, জালিয়াতি ও প্রতারণাসহ নানাবিধ মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
বিচারপ্রার্থীদের জোর দাবি— কলাপাড়ায় দ্রুত নতুন বিচারক নিয়োগ দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম সচল করা হোক। এ দাবির প্রতি দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা। ন্যায়বিচার যেন কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায়— এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।