“ভবিষ্যতের পথে অচেনা অন্ধকার: নিটারের শিক্ষার্থীরা কি হারিয়ে ফেলছে স্বপ্ন দেখার সাহস?”

শুধু কিছু নম্বর নয়, জীবনের প্রতিটি ক্লাসেই যেন হেরে যাচ্ছে নিটারিয়ানরা। জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (নিটার)-এর শিক্ষার্থীরা আজ এমন এক যাত্রাপথে দাঁড়িয়ে, যেখানে গন্তব্যের চেয়েও প্রশ্ন বেশি, উত্তর কম।
নিটার কখনো কারও স্বপ্ন ছিল, কখনো বাধ্যতামূলক গন্তব্য। কিন্তু এই ক্যাম্পাসে পা রাখার পর অনেকের মধ্যেই জন্ম নিচ্ছে এক গভীর অনিশ্চয়তা — আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি?
সাম্প্রতিক সময়ে সকল ব্যাচের সেমিস্টার ফাইনালের ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী পার করতে ব্যার্থ সেমিস্টারের গন্ডি। কেউ কেউ একাধিক বিষয়ে ফেল করেছে, কেউবা পুরো সেমিস্টারে ক্লাস করার পরও পায়নি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল। হতাশা যেন ঘরবাড়ি বানিয়ে বসেছে ছাত্রদের মনে। আসলেই কী শিক্ষিত জাতি তৈরি করতে সক্ষম নিটার তথা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা।
অন্যদিকে একাডেমিক সাপোর্টের অভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও বেশি অস্থিরতা তৈরি করছে। নেই পর্যাপ্ত গাইডেন্স, নেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণার পরিকাঠামো। এমন অবস্থায় তারা প্রশ্ন করছে — বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পেলেও, পাচ্ছে কী জ্ঞান, দিকনির্দেশনা আর ভবিষ্যতের একটা সুনির্দিষ্ট দিশা?
নিটারও এর ব্যাতিক্রম নয়। দেশের বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠানে নেই একজনও পূর্ণাঙ্গ প্রফেসর। অনেকে বলেন, ভালো আবাসন সুবিধা না থাকায় শিক্ষকেরা এখানে দীর্ঘস্থায়ী হতে চান না। যারা আসেন, তাদের সকাল শুরু হয় ছয়টার আগেই, এবং ফেরেন রাতে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে।
এই ক্লান্তি শুধু দেহে নয়, প্রভাব ফেলে মনে এবং ক্লাসরুমে। গবেষণা, প্রজেক্ট গাইডেন্স, কিংবা ব্যক্তিগত সময় দেওয়া সবই হয়ে পড়ে অসম্ভব। আর শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন অপেক্ষা করে, কেউ হয়তো কখনো একটু বেশি সময় দেবে — একটু বেশি বুঝিয়ে বলবে।
হাজারো হতাশার মাঝে নিটারের কারিগরি দিকটি প্রশংসনীয় — কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাব সুবিধা রয়েছে দেশ সেরা, একটু মনোযোগী হলেই সুযোগ আছে হাতে কলমে অনেক কিছু শেখার। এই শিক্ষার উপর ভর করে কর্ম জীবনে টিকে থাকে অনেকে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় — এগুলো কি যথেষ্ট একজন প্রকৌশল শিক্ষার্থীর তার নিজের জায়গা থেকে নিজেকে গড়ে তুলতে?
জবাব হয়তো শিক্ষার্থীদের চুপ থাকা মুখেই লুকিয়ে থাকে।
এই প্রশ্ন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, অভিভাবক, শিক্ষক এমনকি নীতিনির্ধারকদেরও করা উচিত। নিটার কি শুধুই একটি নামমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে থাকবে, নাকি একদিন সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠবে জ্ঞানের বাতিঘর?
এখনো হয়তো দেরি হয়নি। হয়তো এখনো সম্ভাবনা আছে কিছু বদলে দেওয়ার। প্রয়োজন শুধু একটু সদিচ্ছা, একটু সহানুভূতি আর কিছু দূরদৃষ্টি।