প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্র্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। দীর্ঘায়িত বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মনপুরায় ও কয়েক দফা ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে আছে উপজেলার অন্তত শত শত পুকুর ও মাছের ঘের। মৎস্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। ভারী বৃষ্টিতে কৃষকদের ফসলি জমি, ক্ষেতের সবজিসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আহসান তাওহিদ বলেন,ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছে আমাদের মাঠ কর্মীরা যাচ্ছে । ক্ষতিগ্রস্ত পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবো।
মনপুরায় কৃষি ও মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারী বর্ষণে মৎস্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে অন্তত কোটি টাকা। আর কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে উপজেলায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত শত কোটি টাকা।
উপজেলা মৎস্য ব্যবসায়ী মো: মাইনুদ্দিন জানান, বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে এ বছরও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে তার এগারোটা ঘেরই তলিয়ে যায়। ইতিমধ্যে প্রান্তিক এই মৎস্য ব্যবসায়ী ৮৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন নিমিষেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ধার দেনা করে মাছ ছাড়লেও সব মাছ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে।
অপর মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ রাজীব জানান, আমার ৫০ শতাংশ জমির মধ্যে দুটি মাছের ঘের ছিল এতে কিস্তির টাকা নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী বিদেশী মাছের চাষাবাদ করেছিলাম বৃষ্টির পানিতে ঘের ডুবে আমার সব মাছ চলে গেছে তাতে পাঁচ লক্ষেরও বেশি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । আমার পরিবার এখন রাস্তায় বসেছে ।
স্থানীয় কৃষক ও মৎস্য ব্যবসায়ী মো: মিজান বলেন, মনপুরায় প্রতিটি বিল ও ঘের অঞ্চলের মৎস্য ব্যবসায়ী ও কৃষকদের একই অবস্থা। কয়েক দফা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় বহু রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল, মাছের ঘের ও পুকুর। এতে চরম বিপাকে পড়েন উপজেলার শত মৎস্য ব্যবসায়ী ও কৃষক।
মনপুরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলী আহমেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ঘের ব্যবসায়ীদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হবে। বরাদ্দ না পেলে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ নেই। মৎস্য ব্যবসায়ীরা যাতে আগামীতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সে জন্য মাঠ পর্যায়ে তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মাঠকর্মীরা।
দীর্ঘায়িত বর্ষা মৌসুমে টানা কয়েকদিন ভারী বর্ষণে উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপজেলার মৎস্য চাষি ও প্রান্তিক কৃষকরা। ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
এছাড়াও সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ ,দাসেরহাট, উত্তর সাকুচিয়া , রহমানপুর ও জংলারখাল এলাকায় পানি বন্দি হয়ে আছেন বিশ হাজারের মতো লোক। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব এখনও পাইনি সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা ও শুকনো খাবার।