নীলফামারীর সৈয়দপুরের কিশোরী রুবায়েত হোসেন মৃত্তিকা। সে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে। কিন্তু বয়সের তুলনায় সাহস, দৃঢ়তা আর নেতৃত্ব তাকে আন্দোলনের প্রতীক বানিয়েছে।

পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর ১৭ জুলাই আন্দোলনে নামার ডাক দেয় মৃত্তিকা। সে সময় নিজের মায়ের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে লিখে, ‘কাল সকাল ১১টায় মিছিল’, এই এক লাইনের ডাকেই সৈয়দপুর শহরে পাঁচমাথা মোড়ে জড়ো হয় শত শত শিক্ষার্থী।

তবে এই সাহসিকতার জন্য হুমকির শিকার হতে হয় মৃত্তিকাকে। পরদিন সকালে যখন বিক্ষোভ শুরু হয়, তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে। এতে মৃত্তিকাসহ অনেকেই আহত হন। গুলিবিদ্ধ হয় তার ডান হাত, তবুও থেমে থাকেনি সে।

২১ জুলাই রাতে বিক্ষোভ শেষে বাড়ি ফিরেছিল মৃত্তিকা। মা রুবি বেগমের সঙ্গে ঘুমাতে গেলে রাতের আঁধারে পুলিশের হানা। দরজা ভেঙে ঢুকে তারা মৃত্তিকার মাকে আটক করে।

মৃত্তিকা বলে, আমি ভয়ে চিৎকার করি, পরিবারের লোকজন ছুটে আসে, কিন্তু পুলিশ আমার মাকে নিয়ে যায়। এরপর নিরাপত্তাহীনতায় আমি কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকি। মায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও পারিনি।

৪ আগস্ট দুপুরে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল ইন্টারনেট। পুলিশের উপস্থিতি, গ্রেপ্তারের আতঙ্ক- সব মিলিয়ে ভয়ের পরিবেশ। কিন্তু মৃত্তিকা দমে যায়নি। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নানা পথে যোগাযোগ করে আবারো আন্দোলনে অংশ নেয় সে।

৫ আগস্ট সকালে আবারও পাঁচমাথা মোড়ে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পুলিশের কঠোর নজরদারি থাকা সত্ত্বেও তারা চালিয়ে যায় বিক্ষোভ। দুপুরে খবর ছড়িয়ে পড়ে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেছেন। এতে আনন্দে ফেটে পড়ে গোটা শহর।

মৃত্তিকা বলে, আমরা স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে লড়েছি। আবু সাঈদের মৃত্যু আমাকে বিচলিত করে। আমার মা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত- এই অভিযোগে পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে তাকে নিয়ে যায়। তখন আমাকেও অপমান করা হয়। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হই আমি। হাসপাতালে নিতে না পেরে মামা বাড়িতেই চিকিৎসা করান। সুস্থ হয়ে আবারও আন্দোলনে ফিরে যাই।

সাহসী এই কিশোরী বলে, টেলিভিশনে ভাই-বোনদের মৃত্যু আর বাঁচার চিৎকার আমাকে আন্দোলনে টেনে নেয়। শেখ হাসিনার পতনের পর আমরা যেন নতুন করে শ্বাস নিতে শুরু করি।