জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে "জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার অংশগ্রহণ ও বর্তমান বাস্তবতা" শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী আজ ২ আগস্ট ২০২৫ সকাল ১০টায় মাগুরা রেডিয়েন্ট স্কুল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ মাগুরা জেলা শাখার সমন্বয়ক প্রকৌশলী শম্পা বসুর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের কেন্দ্রীয় সংগঠক লাবনী সুলতানা। আলোচনা সভার শুরুতে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভা শেষে রচনা লেখা ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় ভালো ফলাফল প্রাপ্ত ২৫জন শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার করছি আমরা। বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্ক্ষায় এদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অপরিসীম আত্মত্যাগ আর সাহসী লড়াইয়ের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল এদেশের জনগণ। দীর্ঘদিন ধরে জনগণের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মতো যে স্বৈরাচারী সরকার বসেছিল, জনগণের বাক-ব্যক্তি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করে একটা ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্রকে পরিচালনা করে আসছিল তার বিরুদ্ধে ১৬ বছরের লড়াইয়ের বহমান এক ফল্গুধারা মিলিত হয়েছিল জুলাই আন্দোলনে। জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে স্বৈরাচারী হাসিনা এবং তার দলীয় ক্যাডার বাহিনী শুধু ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ নয় দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়।
বক্তাগণ আরও বলেন, একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে কিন্তু যে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এই ফ্যাসিস্ট উৎপাদন করে সে ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করা ছাড়া জনগণের মুক্তি আসবে না। আদতে তাই দেখা গেল, এক ফ্যাসিস্ট রেজিমের অবসান হতে না হতেই আর এক স্বৈরাচারী শক্তির উত্থান বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে, নারীদের উপর আক্রমণ, তাদের স্বাধীন চলাফেরায় বাধা দেয়া, মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে মাজার ভাঙা, বাউল আখড়ায় হামলা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন স্মারক ভাঙাসহ জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকারকে হরণ করা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা দূর করতে না পারা, দেশের সম্পদ বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার নানা নতজানু নীতি গোটা দেশের মানুষকে হতবাক করেছে। জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, সুষ্ঠু অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে চলছে নানা তালবাহানা। পূর্বের ন্যায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি-লুটপাট ইত্যাদি নানা কিছুরও বহু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তাই আজ জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দাঁড়িয়ে একদিকে যেমন আমাদের সংগ্রামের শক্তিকে স্মরণ করা দরকার আবার একই সাথে সেই লড়াইয়ের শপথকে পুনর্বার উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিরোধের দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াও প্রয়োজন।