নওগাঁর মান্দা উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৩ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ১০ থেকে ১ টা পর্যন্ত উপজেলার প্রসাদপুর বাজারে মিতালী রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন আন্ডার গ্রাউন্ডে অবস্থিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এসব পদে মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেন তারা। এর আগে গত ৮ জুলাই মঙ্গলবারেও অনেকে বিভিন্ন পদে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন। উক্ত দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক এম.এ মতীন,উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মখলেছুর রহমান মকে ও আজিজুল হক ওয়ালটন বাবু। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকরামুল বারী টিপু। সাংগঠনিক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন , এ্যাড.কুমার বিশ্বজিৎ সরকার, এস এম রফিকুল ইসলাম, শামশুল ইসলাম বাদল, আব্দুল মতিন মন্ডল, নূর বক্স মন্ডল এবং আজাহার আলী সেতু। অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে মান্দা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এ.কে এম নাজমুল হক নাজু এবং সাংগঠনিক পদে যুগ্ম আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন টুকু মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করলেও সঙ্গত কারণে জমা দেননি তারা।
মান্দা উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে ৬ সদস্যের একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য স ম আ আল কাফি তুহিন।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন,জেলা বিএনপির সদস্য সরদার সাইফুল ইসলাম সাজু, মান্দা উপজেলা বিএনপির সদস্য গোলাম সরোয়ার স্বপন, সাইদুর রহমান মোল্লা, ফজলুল বারি সাফি এবং এমরান হোসেন। এই কমিটিই কাউন্সিলের পুরো মনোনয়ন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, ভোটগ্রহণ এবং আয়-ব্যয়সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনা তদারকি করবেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য গোলাম সরোয়ার স্বপন বলেন,“আমরা এই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মান্দা উপজেলা বিএনপিকে গঠনতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার এ সুযোগকে আমরা ঐতিহাসিক দায়িত্ব হিসেবে দেখছি। যারা মাঠে সক্রিয়, দলের দুঃসময়ে পাশে থেকেছেন তাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে এমন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যা মান্দা উপজেলা বিএনপিকে নতুন শক্তি ও গতি দেবে।”
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন, “দীর্ঘদিন পর এই কাউন্সিলের মাধ্যমে মান্দা উপজেলা বিএনপিতে গণতান্ত্রিক চর্চার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা চাই, এই কাউন্সিল কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণের জায়গা হোক। নির্বাচনের প্রতিটি ধাপ হবে নিয়মতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক। বিএনপির তৃণমূলের শক্তিকে সংগঠিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য, যেন আগামী দিনে আন্দোলন ও নির্বাচনে মান্দা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারে।”
মান্দা উপজেলার তৃণমূল বিএনপি কর্মীদের মতে, কয়েক বছর ধরে কোনো পূর্ণাঙ্গ উপজেলা কমিটি গঠিত না হওয়ায় দলে সাংগঠনিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির ভেতরে নেতৃত্বের অস্থিরতা, পদ-পদবির অনিশ্চয়তা এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনার ঘাটতি সব মিলিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ।
দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের ঘোষণা ঘিরে মান্দা এখন সরগরম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে পোস্টার, ব্যানার, ভিডিও বার্তা ও ব্যক্তিগত স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সম্ভাব্য নেতারা নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরছেন। উপজেলার বিভিন্ন মোড় ও বাজারে শোভা পাচ্ছে নেতাকর্মীদের পোস্টার। চায়ের দোকানে চলছে আলোচনা, সমালোচনা।
একজন যুবনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা চাচ্ছি এমন নেতৃত্ব যারা মাঠে থাকবে, নেতাকর্মীদের পাশে থাকবে। শুধু কাগজে থাকা কমিটি চাই না; চাই বাস্তব নেতৃত্ব।”
উপজেলা বিএনপির অনেকেই মনে করেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে মান্দায় বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি আসবে। বিশেষ করে সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির আন্দোলনমুখী কৌশলে, সক্রিয়, জনপ্রিয় ও দৃঢ় নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এক প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই কাউন্সিল যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়, তাহলে মান্দা শুধু একটি কমিটি পাবে না বরং নওগাঁর বিএনপি আন্দোলনের জন্য একটি শক্ত ঘাঁটি ফিরে পাবে।”
উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এখন একটি স্লোগান ঘুরে ফিরছে “পূর্ণাঙ্গ কমিটি চাই, কর্মীর মর্যাদা চাই”। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাউন্সিল ঘিরে কর্মীদের মধ্যে ফিরে এসেছে উৎসাহ, প্রত্যাশা ও আত্মবিশ্বাস। কর্মীরা মনে করেন, নেতৃত্বের পুনর্গঠন না হলে বড় কর্মসূচিতে মান্দা পিছিয়ে পড়বে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে, মান্দা উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন শুধু একটি আনুষ্ঠানিক দলীয় কার্যক্রম নয় এটি হতে পারে তৃণমূলের কর্মীদের নতুন আশার আলো, স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ।
নেতৃত্ব সঠিক হলে শুধু একটি উপজেলা নয়, গোটা জেলার রাজনীতিতেই ফিরবে প্রাণ, সংগঠনে আসবে গতি এই বিশ্বাসেই নেতাকর্মীরা এখন তাকিয়ে আছেন ঘোষিত নির্বাচনী কমিটির কার্যক্রমের দিকে।
বহুদিন পর এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন ঘিরে মান্দা বিএনপির রাজনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার হয়েছে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকেই বলছেন, এ কাউন্সিলের মাধ্যমে উপজেলা বিএনপি একটি শক্তিশালী, গতিশীল ও ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব পাবে এমনটাই প্রত্যাশা নেতা-কর্মীদের।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গতি ফিরছে নওগাঁর মান্দা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে। বহু কাঙিক্ষত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ‘দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল ২০২৫’-এর তফসিল।দলটির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করে অবশেষে এই কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৮ জুলাই (শুক্রবার) মান্দা এস.সি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এই লক্ষ্যে ঘোষিত হয়েছে দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল-২০২৫। কাউন্সিলকে ঘিরে ইতোমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে মনোনয়ন ও নির্বাচনের সময়সূচি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ জুলাই ও ৯ জুলাই সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম উত্তোলনের পর নির্ধারিত সময়ে তা জমা দেন প্রার্থীরা। এরপর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আগামী ১০ জুলাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।