ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি”র প্রভাবে মেঘনা- তেঁতুলিয়ার পানি বৃদ্ধিতে চরফ্যাশন উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল ৪-৫ ফুট উচু পানিতে প্লাবিত হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর, চর মোতাহার, চর মানিকা, চরকলমি ও চর কুকরিমুকরি সহ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০টি বিছিন্ন দ্বীপ চরের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ভেসে গেছে গবাদি পশু। তলিয়ে গেছে বেশকিছু নিমাঞ্চল গ্রাম। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। এছাড়াও টানা বর্ষণে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। ভেঙ্গে পড়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে জীবন -জীবিকার সংকট। চাল চুলো কিছুই নেই অনেকের।
বৃহস্পতিবার ২৯ মে প্রায় ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভোলা আবহাওয়া দপ্তর।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে জোয়ারের তোরে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/ ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার ভোররাত থেকে চরফ্যাশন উপজেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের খেজুর গাছিয়া বেড়ি বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার খবরে জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্ক দেখা দিছে উপকুলিয় এলাকায়। বাঁধের ভাঙ্গন অবস্থা দেখে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশসহ রাজনৈতিক দলের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্র পাঠানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারলেও বেশি সংখ্যক মানুষ রয়েছেন পানিবন্দি।
এদিকে উপজেলার সাগরকুলের চর কুকরি, মজিব নগর, চরপাতিলার ঢালচর সহ মেঘনা - তেঁতুলিযা নদীর মধ্যবর্তী চরাঞ্চালগুলো প্রায ৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তীব্র বাতাস আর উত্তাল মেঘনা- তেতুলিয়ার জোয়ারের পানিতে হুমকির মূখে রয়েছে ৬.৪ কিলোমিটার বাঁধ। সকাল থেকে উপজেলার ৭টি নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলেরা তাদের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নিরাপদে স্থানে চলে গেছে।
ঢালচরের বাসিন্দা অনেকে জানান, ঢেউয়ের তোরে ঢালচরে নদীভাঙনও বেড়ে গেছে। চরের বাসিন্ধারা বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে। ঢালচর মাছ ঘাটের ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিক দোকানপাট সরিয়ে নিতে চরম হিমশিম খাচ্ছে। ঢালচর ও চর নিজামে ১০০টি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্ধা জামাল সহ অনেকে। উপকূলীয় বেশ কিছু এলাকায় বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি খামারের খাদ্য শস্য। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।
এর রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকেই আকাশ মেঘে কালো হয়ে আছে। প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া বইছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকুলের বাসিন্দারা। এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে গত বুধবার ২৭ মে সন্ধ্যা থেকে শুত্রবার ৩০ মে দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে পুরো চরফ্যাশন। বিদ্যুৎ না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে টেলিযোগাযোগ সেবার ব্যবস্থা। অধিকাংশ এলাকায় বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। এছাড়া দেখা দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক জটিলতা।
চরফ্যাশন জোনাল অফিসার মো মিজানুর রহমান জানান, বুধবারর সন্ধ্যার পর থেকে জেলার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছে। চরফ্যাশনেও ঝড়ের গতি বেশি। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ছে। এসব কারণে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাতাসের গতি কমে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে। ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো ইউসুফ জানান, ঝড়ো বাতাসের কারণে বিদ্যুৎ লাইনগুলো ঘনঘন ট্রিপ করছে। লাইনের পাশের গাছপালা তারের ওপর পডলেই লাইন বন্ধ হয়ে যায। অতি বৃষ্টির কারণে বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তাদের কর্মীরা বৈরী আবহাওযার মধ্যেও কাজ করছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার বেতুয়া লঞ্চ ঘাট, হাজারীগঞ্জ ও জাহানপুর ইউনিয়নসহ বেশকিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ঘুর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে বেড়িবাধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘাটে নোঙ্গর করা প্রায় শতাধিক ছোট-বড় নৌকা ও মানুষের ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর তলিয়ে গেছে। চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার জোয়ারে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি'র কাছে সর্ব শেষ বন্যা পরিস্থিতি জানতে মোবাইলে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ঘূর্ণিঝড় শক্তি মোকাবেলায় উপকুলীয় ঝুঁকিপুর্ণ এলাকায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলায় ২৫৬ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রায় ৩শতেকের বেশি স্বেচ্ছাসেবী মোতায়ন করা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী গিয়াস উদ্দিন বলেন, চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ডিভিশন-২)নির্বাহী প্রকৌশলী ঘুরে দেখে গেছেন। শুক্রবার এখানকার সাবেক এমপি আলহাজ্জ নাজিম উদ্দিন আলমের নির্দেশে খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান চররফ্যাশন উপজেলার যুবদলের সাবেক সভাপতি আশ্রাফুর রহমান দিপু ফরাজী। তিনি ২শতাধিক নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে স্বেচ্ছায় বাঁধ নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছেন।