রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে যুবদল কর্মীদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। ১১ জুলাই, শুক্রবার রাত ৯টায় জবি শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘুরে এসে রফিক ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিলজুড়ে শিক্ষার্থীরা মুখর হয়ে ওঠেন নানা স্লোগানে। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়—
“যুবদলের অনেক খুন, পাথর দিয়ে মানুষ খুন”,
“বিএনপির অনেক গুণ, ১০ মাসে ১৫০ খুন”,
“মিটফোর্ডে হত্যা কেন, তারেক রহমান জবাব দে”,
“জিয়ার সৈনিক, চাদা তোলে দৈনিক”,
এবং সবচেয়ে আলোচিত— “চাদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে”। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জবির বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।

১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ইসলামী ছাত্রশিবির জবি শাখার সেক্রেটারি আব্দুল আলিম আরিফ বলেন,“৯ জুলাইয়ের হত্যার ভিডিও কেন দুই দিন পর প্রকাশ পেল—এই প্রশ্নের জবাব চাই। যুবদলের পক্ষ থেকে চাঁদার জন্য যেভাবে একজন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। আমরা ইন্টেরিম সরকারকে অনুরোধ করবো—এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও কঠোর বিচার নিশ্চিত করুন।”

১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা নূরনবী বলেন,“এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখে আমাদের মনে পড়েছে বিশ্বজিৎ হত্যার কথা। আজ যুবদল সেই একই নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি করেছে, যা অতীতে ছাত্রলীগ করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শক্তির মতোই বিএনপি-যুবদলও সহিংসতা শুরু করেছে। আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই—যেভাবে ৫ আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিতারিত করেছি, প্রয়োজন হলে এবারও একই পথ বেছে নেব।”

জবি শিক্ষার্থী রায়হান হোসেন রাব্বি বলেন,“অভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্ণ না হতেই মানুষের সামনে পাথর দিয়ে খুনের মতো ঘটনা ঘটছে, শুধু চাঁদার জন্য। এ থেকে স্পষ্ট যে বিএনপি ও যুবদল গণতন্ত্রের নামে আরেক ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছে। যদি দ্রুত এই হত্যার বিচার না হয়, আমরা তাদের রাজনীতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করব।”

উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে মো. সোহাগ (৪৩) নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, চাঁদা না দেওয়ায় যুবদল সংশ্লিষ্টরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এই নির্মম ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সারাদেশে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার সৃষ্টি হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি সেই জনরোষেরই ধারাবাহিক বহিঃপ্রকাশ।