দুই দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ১৭ তম দিনে আজ শুক্রবার (১৩জুন) বিকালে এক নাগরিক সমাবেশে সমাপনী বক্তব্যে নারী অধিকার কেন্দ্রের সমন্বয়ক সীমা দত্ত বলেন,দয়া করে তথ্য কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগের ট্যাগ দিবেন না,অতীতে যারা এমন ট্যাগ দিয়েছে তারা আজ ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিপতিত হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পরে সারাদেশের নারী আন্দোলনকারীদের ঢাকায় এনে সম্মান দিয়েছে সরকার কিন্তু তথ্য কর্মকর্তারা হচ্ছে সাইবার বুলিং এর শিকার। তাদেরকে আওয়ামী ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি আগামী ৩০ জুনের পূর্বেই তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুই দফা দাবি মেনে নিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান।
সূচনা বক্তব্যে তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মকর্তা সঙ্গীতা সরকার বলেন, আমাদেরকে আওয়ামী ট্যাগ দিবেন না, ট্যাগ যদি দিতেই হয় রাষ্ট্রের কর্মচারী ট্যাগ দিন।তিনি বলেন-৭ বছরে মেধা, যোগ্যতা,শ্রম, কর্তব্য নিষ্ঠা ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে জনগণের জন্য কাজ করেছি। কোনো দলের পক্ষে নয়,দেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমাদেরকে বাদ দেওয়া চলবে না।আমরা রাষ্ট্রের সব নিয়মকানুন মেনেই এই প্রকল্পে নিয়োগ পেয়েছি।তখন বলা হয়েছিল আমাদেরকে নিয়ে রাষ্ট্র ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিবে।সেই আশায় এতদিন ধরে ধৈর্য সহকারে কাজ করে যাচ্ছি।তাই, আমাদের চাকুরি স্থায়ী করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। তিনি আরো বলেন, এতদিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিলেও দায়িত্বশীল কেউ যোগাযোগ করেনি।টানা চারদিন না খেয়ে আমরা এখানে ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে হামলার শিকার হয়েছি। অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরকেও হামলা থেকে রেহাই দেওয়া হয় নাই। গত ০১ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেই কিন্তু আমাদের সাথে কথা না বলেই বিদায় করে দেয়।তিনি আরো বলেন,৩ ধাপে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ পেয়েছি। সরকারি চাকরির বয়স পার হয়ে যেতে পারে বলে আমাদের চাকুরি রাজস্বভুক্তির কথা বলে বিভিন্ন সময়ে বেতন ও ভাতা কর্তন করে নেয়া হয়েছে।সেই টাকা কোথায় গিয়েছে কোনো হিসাব নাই। আমাদেরকে আওয়ামী দোসর ট্যাগ দেওয়া অন্যায়,আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চাই।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মার্সিয়া প্রভা ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায় সুপ্তির যৌথ সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কুমিল্লার গোমতী উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা শান্তা ইসলাম।তিনি বলেন, আর কত দিন আমরা রাস্তায় বসে থাকবো,এ চাকুরি আমাদের রক্তের সাথে মিশে গেছে। আমাদের সস্মান ও জীবিকা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র মেনে নিব না।আমরা রাষ্ট্রের কর্মী হিসাবে বাঁচতে চাই।
উল্লেখ্য যে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত তথ্য আপা প্রকল্পে (২য় পর্যায়) কর্মকর্তাদের সমগ্রেডে পদসৃজনপূর্বক রাজস্ব খাতে স্থানান্তর এবং বিভিন্ন সময়ে কেটে নেয়া বেতন ও ভাতাগুলো অবিলম্বে পরিশোধের দাবিতে ঈদ উল আজহার আগে গত ২৮ মে থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। এমনকি পবিত্র ঈদুল আজহার দিনও তারা প্রেসক্লাবের সামনেই ছিলেন কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে।
দাবি আদায়ে ০১ জুন পুলিশের কয়েক দফা বাধা পেরিয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। সেদিন শেষ বিকালে পুলিশ তাদেরকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেয়।
আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, তাদের চাকুরি স্থায়ী করণের কথা বলে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রতিমাসে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ২৪০০ টাকা এবং সহকারীদের কাছ থেকে ১৩৯০ টাকা করে কেটে নেয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৪৯২ টি উপজেলা তথ্য কেন্দ্রে ১জন করে তথ্য সেবা কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড),দুজন তথ্যসেবা সহকারী (১৬তম গ্রেড) ও একজন করে অফিস সহকারী (২০তম গ্রেড) মিলিয়ে প্রায় ১৯৬৮ জন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন।
তৃণমূল নারীদের স্বাস্থ, শিক্ষা, কৃষি,আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার পরিকল্পনা এবং সাইবার সিকিউরিটি -এই আটটি বিষয়ে জরুরি তথ্য সরবরাহ ও সহায়তা দিয়ে আসছেন তথ্য আপা প্রকল্পের প্রায় দুই হাজার কর্মী।
নাগরিক সমাবেশ শেষে শতাধিক নারী কর্মীদের নিয়ে একটি মিছিল প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।