জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে কয়েকশত শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ সমাবেশের অংশ হিসেবে শনিবার (১লা ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬:৩০ টায় কয়েকশত শিক্ষার্থী জাকসুর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবিতে একটি মিছিল বের করে। বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জাকসু চাই জাকসু চাই দিতে হবে দিতে হবে’, ‘আজকেই তফশীল ঘোষণা করো করতে হবে’, ‘বাহানা দিয়ে জাকসু বানচাল করা যাবে না’, ‘জাকসু নিয়ে টালবাহানা করতে দেওয়া হবে না,অছাত্রদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘আদু ভাইয়ের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। 
এর আগে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বর থেকে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে অবস্থান গ্রহণ করে। 
অবস্থান কর্মসূচিতে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ আসনে ও সিন্ডিকেটে রেখে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশাসন দিতে পারে না। সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচনের দিকে আগালে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার নিশ্চিতের আগে জাকসু নির্বাচন দিলে ছাত্রদল তা মেনে নেবে না। সংস্কার বাদ দিয়ে জাকসুর তফসিল ঘোষণা করলে জাবি ছাত্রদল কঠোর কর্মসূচির দিকে আগাবে।”
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, "অবস্থান কর্মসূচি শেষে আমরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা দাবি বাস্তবায়নে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা সভায় বসি। সভায় তফসিল ঘোষণায় প্রথমে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। তবে প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে আমরা আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তফসিল ঘোষণার কথা বলেছি। এসময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছি।"
এর আগে, ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু নির্বাচনের আগে কয়েক দফা সংস্কারের দাবি জানানো শাখা ছাত্রদল বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তাদের এ কর্মসূচির প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। এসময় উপাচার্য জাকসু নির্বাচন নিয়ে পরিবেশ পরিষদের সভা করছিলেন। সভা শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম পরিবেশ পরিষদ সভার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান৷ কিন্তু শিক্ষার্থীরা এসব বক্তব্য কালক্ষেপণ বলে আখ্যা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন উপাচার্য। এসময় উপাচার্য বলেন, জাকসুর কিছু মৌলিক সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আজকে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি জাকসু সংক্রান্ত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে গত ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে প্রশাসন। পরে ১১ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা ও ২৪ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়৷ এছাড়া রোডম্যাপ অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করার কথা ছিল।