“অতীতে বাংলাদেশকে যারা শাসন করেছে তারা কেউ দিল্লিকে, কেউ লন্ডনকে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। তারা লুটপাট করে পালিয়ে গেছে। কিন্তু আজকের তরুণ প্রজন্মকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না। শেখ হাসিনাও পারেননি। এই প্রজন্মই বাংলাদেশ গড়বে।” — এ ভাষায় আওয়াজ তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। রবিবার (২০ জুলাই) রাতে চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।

চট্টগ্রামের ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাসনাত বলেন, “ঢাকায় ১৬ জুলাই প্রতিরোধ হয়েছিল, চট্টগ্রামে তা হয়েছিল একদিন আগেই। চট্টগ্রাম লড়াইয়ের শহর, প্রতিরোধের শহর। আমরা স্বৈরাচার হটিয়েছি, কিন্তু সফল রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। এখন সময় রাষ্ট্র গঠনের।” তিনি আরও বলেন, “আমার দ্বিতীয় প্রাণের শহর চট্টগ্রাম। এখানকার প্রতিটি উপজেলায় দলকে সংগঠিত করতে হবে—গ্রুপিং ছেড়ে কাজ করতে হবে।”

সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। পাসপোর্ট অফিস থেকে শুরু করে শিক্ষা বোর্ড, থানা, সচিবালয়—সবখানে হয়রানি। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি।” তিনি বলেন, “ধর্ম, জাতি, বর্ণ—এসব বিভাজন আর চলবে না। চট্টগ্রামের মানুষ ধর্মপ্রাণ, আর এখন সময় এসেছে ধর্মের নামে নিপীড়ন প্রতিহত করার।”

সমাবেশে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “কক্সবাজারে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীসহ আমাদের নেতারা সত্য বলার কারণে হামলার শিকার হয়েছেন। বাঁশখালীতে ব্যানারে আগুন দেওয়া হয়েছে, সংগঠকের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা বলি—বাধা দিলে বাধবে লড়াই, আর এই লড়াইয়ে জিততেই হবে।” তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় “বউত দিন হাইয়ো আর না হাইয়ো” বলে নেতাকর্মীদের উত্তেজনায় ভাসিয়ে দেন।

দিনভর সমাবেশকে ঘিরে নগরের বহদ্দারহাট থেকে পদযাত্রা করে বিপ্লব উদ্যানে সমবেত হন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ শেষে আরেক দফা পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।

পুলিশের স্পেশাল ইউনিট সোয়াট ও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন ছিল অনুষ্ঠানস্থলে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহমুদা বেগম জানান, “এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।”

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা:

  • আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

  • সদস্য সচিব আখতার হোসেন

  • দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ

  • উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম

  • মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী

  • সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন

  • সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ।


চট্টগ্রামে এনসিপির এই সমাবেশ ছিল একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা—প্রতিরোধ থেকে রাষ্ট্রগঠনে যাওয়ার লক্ষ্যে তারা প্রস্তুত। ‘জুলাই চেতনা’ এবং তরুণদের জাগরণকে সামনে রেখে দলটি রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করছে।