খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা ভূমি অফিসে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে একজন অভিযোগকারীর পক্ষ থেকে

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা ভূমি অফিসে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে একজন অভিযোগকারীর পক্ষ থেকে। অভিযোগকারী মোঃ একরামুল হক, পিতা-মৃত আঃ রহমান, মাতা-মাফিয়া খাতুন, সাং-তাইন্দং বাজার টিলা, ১৯১নং তাইন্দং মৌজা, ৮নং ওয়ার্ড, ১নং তাইন্দং ইউনিয়ন, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি-সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, তার মরহুম পিতা আঃ রহমানের নামে মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন ১৯১নং তাইন্দং মৌজায় বন্দোবস্তি মামলা নং ২০১৩/৭৭-৭৮ মূলে ১৯নং হোল্ডিংয়ে ২.০০ একর ৩য় শ্রেণির ভূমি রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। পিতার মৃত্যুর পর অভিযোগকারী ও তার ভাইবোনেরা ওই জমির ওয়ারিশ হিসেবে মালিক ও ভোগদখলকারী হিসেবে আছেন। পিতার নামীয় জমাবন্দির নকল কপি উত্তোলনের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি), মাটিরাঙ্গা বরাবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে অভিযোগকারী আবেদন করেন। কাগজপত্রের মধ্যে ছিল জেলা প্রশাসকের প্রদানকৃত উত্তরাধিকার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি, পুরাতন জমাবন্দির কপি, কোর্ট ফি ও খাজনা দাখিলা। তবুও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জমাবন্দি সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, "কবুলিয়তের কপি দিতে হবে"।

অভিযোগকারী জানান, তার পিতার কবুলিয়ত হারিয়ে গেছে এবং এ বিষয়ে তিনি মাটিরাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন (জিডি নং-৬৬৪, তারিখ-১৪/০১/২০২০)। সেই ডায়েরির কপিও তিনি জমা দেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। অভিযোগকারীর দাবি, মাটিরাঙ্গা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে আরও জানা গেছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যক্তিবর্গের ভাষ্যমতে, সহকারী কমিশনার (ভূমি), মাটিরাঙ্গা, নামজারির শুনানি শেষ হওয়ার পরও অনেক মামলার কাগজপত্র ৩-৪ মাস ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করেন না। এতে সাধারণ মানুষের কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি শুধুমাত্র কৌশলে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে হাতেগোনা কিছু সংখ্যক নামজারির ফাইল প্রেরণ করেন। যদিও এ বিষয়ে ঘুষ লেনদেনের সরাসরি প্রমাণ এখনো প্রকাশ্যে আসেনি, তবে মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসে তদন্ত করলে ৩-৪ মাস আগে শুনানি সম্পন্ন হওয়া অনেক নামজারির ফাইল এখনো অপ্রেরিত অবস্থায় পড়ে থাকার প্রমাণ মিলবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

এছাড়াও জানা যায়, তিনি অনেক সময় পুরাতন ও ছেঁড়া বালাম বইয়ের অস্পষ্ট অনুলিপি সরবরাহ করেন যা ব্যবহার অনুপযোগী। অথচ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মৌজাভিত্তিক বালাম বই অনুসন্ধান করে জমাবন্দি সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অভিযোগকারী তার অভিযোগপত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি), মাটিরাঙ্গার এই দায়িত্বহীন ও অসহযোগিতামূলক আচরণের যথাযথ তদন্ত এবং জমাবন্দি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি নীতিমালা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ ও অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন।

সচেতন নাগরিকদেরও দাবি, এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।