বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) সম্প্রতি "ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে" শীর্ষক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) সম্প্রতি "ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে" শীর্ষক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে।  জরিপটি সরাসরি মাঠ পর্যায়ে এবং অনলাইনে উভয় ভাবে পরিচালিত হয়েছে। গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই জরিপটি পরিচালিত হয়। এতে আন্দোলন পরর্বতী সময়ের তরুনদের মনোভাব ও প্রত্যাশা প্রকাশ পেয়েছে।সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে বিওয়াইএলসি'র প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিওয়াইএলসি'র মনিটরিং আন্ড ইভাল্যুয়েশন বিভাগ ও রির্সাচ ম্যানেজার আবুল খায়ের সজীব এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ২৩৮ জন এই জরিপ এ অংশগ্রহণ করে যা মধ্যে ১ হাজার ৫৭৫ জন সরাসরি এবং ১ হাজার ৬৬৩ জন অনলাইনে এই জরিপে অংশগ্রহণ করে।প্রতি পাঁচবছর অন্তর অন্তর বিওয়াইএলসি এই জরিপ করে থাকে।সাধারনত জাতীয় নির্বাচন এর পূর্বে এই জরিপটি করা হয়ে থাকে। বিগত বছরের জুলাই অভ্যুত্থান এর পরিবর্তী তরুনের মনোভাব এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা কোনো বিষয় গুলোকে প্রয়োজনীয় এবং অগ্রাধিকার দিচ্ছে তা তুলে ধরার জন্যই মূলত এই জরিপটি করা হয়। জীবিকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, গণতন্ত্র, সুশাসন ও প্রতিষ্ঠান, শান্তি ও ন্যায়বিচার, অভিবাসন, তথ্য এবং উপলব্ধি, যুব ও রাজনীতি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার নিয়ে কি ভাবছে তরুণ সমাজ তার প্রতিফলন উঠে আসে এই জরিপের ফলাফল এ। ৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ সরাসরি এবং ৮১ দশমিক ৫০ শতাংশ তরুন জানায় তারা বিগত সরকারের আমলের চেয়ে বর্তমানে পাবলিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের মতামত প্রকাশ এ স্বাচ্ছন্দবোধ করছে। এই জরিপে আরো জানা যায় ,সরাসরি ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং অনলাইনে ৫০ দশমিক ৯০ শতাংশ তরুন চান অন্তর্বতীকালীন সরকারের মেয়াদ অন্তত ১-৩ বছর হওয়া উচিত।তরুণদের মতামত ও প্রধান অনুসন্ধান

১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার:
• সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের ৪১.৪০% এবং অনলাইনে ৫০.৯০% তরুণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১-৩ বছরের জন্য দায়িত্বে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।

২. শান্তি ও নিরাপত্তা:

• ২০.৯০% সরাসরি এবং ৫৪.৪০% অনলাইনে অংশগ্রহণকারী তরুণ নিশ্চিত নন যে বাংলাদেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রয়েছে।
• নারীর নিরাপত্তা নিয়ে সরাসরি ২৫.৩০% এবং অনলাইনে ৭০% তরুণের শঙ্কা রয়েছে।

 ৩. উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ:

• ৫২.৫০% সরাসরি এবং ৫১.৫০% অনলাইনে অংশগ্রহণকারী তরুণ ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

 ৪. শিক্ষা ও ছাত্র রাজনীতি:

• ৭১% সরাসরি এবং ৮৬.৪০% অনলাইনে অংশগ্রহণকারী মনে করেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে।
• শিক্ষার মান উন্নয়নকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে তরুণরা।

 ৫. জলবায়ু পরিবর্তন ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি:

• ৭৩.১০% সরাসরি এবং ৫৫.১০% অনলাইনে অংশগ্রহণকারী তরুণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার হয়েছেন বলে জানান।
• ৭৫.১০% সরাসরি এবং ৬৪.৮০% অনলাইনে অংশগ্রহণকারী তরুণ মনে করেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে।

 ৬. ভোটাধিকার:

• ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী তরুণদের ৯৫% এর বেশি আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।

 ৭. দেশান্তর:

• ২১.৮% সরাসরি এবং ৪৭.৮% অনলাইনে অংশগ্রহণকারী তরুণ বিদেশে স্থায়ী হতে চান। তবে, ৮০% এর বেশি তরুণ জানিয়েছেন, দেশের পরিস্থিতি উন্নত হলে তারা দেশে ফিরে আসবেন।

 ৮. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি:

• ৮৬.৪০% সরাসরি এবং ৩৯.২০% অনলাইনে অংশগ্রহণকারী মনে করেন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে।

 ৯. মিডিয়ার ভূমিকা:

• ২৮.৯০% সরাসরি এবং ৪৯.৫০% অনলাইনে অংশগ্রহণকারী মনে করেন, বাংলাদেশের মিডিয়া সঠিক তথ্য প্রচারে ব্যর্থ।

সংবাদ সম্মেলনে বিওয়াইএলসির নির্বাহী পরিচালক তাহসিনা আহমেদ বলেন, “তরুণদের মতে রাষ্ট্রের সংস্কার অপরিহার্য। তারা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিরাপত্তাহীনতার অবসান চায়। তারা সুশাসন ও জবাবদিহিতার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়।”বিওয়াইএলসি-এর অফিস অব প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর ডেপুটি ম্যানেজার আহসান হাবিব বলেন, "শান্তি, ন্যায়বিচার এবং সুশাসন প্রচারে যুব সমাজের ভূমিকা নিয়ে আমরা বিওয়াইএলসি-তে ক্রমাগত কাজ করি। যদি সরকার একটি সক্ষম পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়, তবে যুব সমাজ কিভাবে নেতৃত্বের মাধ্যমে জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করবে? " ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে দেখিয়েছে যে, যুব সমাজ রাজনৈতিক দলে সংস্কার দাবি করছে। প্রচলিত পদ্ধতিগুলো প্রত্যাখ্যান করছে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থবহ পরিবর্তন চাইছে। তারা শুধু পরিবর্তন চায় না; তারা পরিবর্তনের অংশ হতে চায় এবং বিওয়াইএলসি সবসময় তাদের মূল্যবোধ, দক্ষতা, এবং মানসিকতা উন্নত করতে পাশে থাকবে। বিওয়াইএলসি-এর কমিউনিকেশন, মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার কাযরিয়া কায়েস বলেন, যুব সমাজ এখন দায়িত্ব নিচ্ছে এবং ভবিষ্যত গড়ছে। ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে-তে দেখা গেছে, অনেক তরুণ সঠিক সুযোগ পেলে বাংলাদেশে ফিরে আসতে আগ্রহী, যা একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়। তারা বিভ্রান্তিমূলক এবং ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে এবং তথ্য যাচাই ও স্বচ্ছতার প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। তারা একটি জবাবদিহিমূলক ও তথ্যসমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সাহায্য করবে।