আয়মানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায়। সেখানে বাবা বাপ্পি হাওলাদার ব্যবসার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। খুবই হাসিখুশি শিশু ছিল আয়মান।
ঘটনার দিন ক্লাস শেষে আয়মান দোলনায় দোল খেতে ব্যস্ত ছিল। ঠিক তখনই বিকট শব্দে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। ভয় পেয়ে দ্রুত সরে আসার চেষ্টা করলেও তার শরীরে পড়ে আগুন ছড়িয়ে যায়। পিঠ ও হাত-পা ঝলসে যাওয়ার পরও সে সাহস করে এক শিক্ষিকার কাছে গিয়ে মোবাইলে পরিবারকে নিজের বিপদের কথা জানায়।
পরিবারের উদ্যোগে তাকে দ্রুত প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। চারদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
ছোট মামা মোহাম্মদ শামীম জানালেন, আয়মানের মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকা শোকের সাগরে ডুবে যায়। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
আয়মানের মামি সাফিয়া বলেন, ও বাসায় এলেই আমাকে জড়িয়ে ধরত। খুব মিষ্টি করে কথা বলতো। ১৫ দিন আগে যখন আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে গেলো, সেদিন ও আমার সাথেই থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু বাসায় মেহমান থাকায় ওর সে ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারিনি। খুব লক্ষ্মী মেয়ে ছিল আয়মান। ছোট দুই বোনকে এত ভালোবাসত, দগ্ধ শরীর নিয়ে বোনদের খবর নিতো। কাতর কণ্ঠে বলতো‘মা, আমার বোনেরা কেমন আছে।
প্রতিবেশী আলিফা বলেন, “আয়মান খুব মিষ্টি মেয়ে ছিল, সবাই তাকে খুব আদর করতো। ওর এমন অকাল মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছি না। এমন দুঃখ যেন আর কেউ না পায়।”
আরেক প্রতিবেশী নূরজাহান বেগম বলেন, “ও যখন ছুটিতে গ্রামে আসতো, বাড়ির সবাই খুব খুশি হতো। পাড়ার আনাচে-কানাচে দৌড়াদৌড়ি করতো। আজ আয়মানের লাশ দেখে বুকটা ফেটে গেলো।”
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ সহকারী কমিশনার ভূমি ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, “উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা জানতে পেরেছি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়মান মারা গেছে। উপজেলা প্রশাসন তার পরিবারের পাশে থাকবে।"