ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের অনবরত অত্যাচার, নিপীড়ন এবং বোমা,ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের অনবরত অত্যাচার, নিপীড়ন এবং বোমা,ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব । সারা বিশ্বের মুসলিমদের মতো বাংলাদেশের সরকার ও জনগণও ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছেন ।এর অংশ হিসেবে অনেকেই ইসরায়েলের পন্য বর্জনের ডাক দিচ্ছেন ।তবে এখানে একটা বিপদজনক বিষয় লক্ষণীয় যে, অনেক পন্য ইসরায়েলের নয় কিন্তু ইসরায়েলের পন্য হিসেবে প্রচার পাচ্ছে । আমি শুরুতেই আপনাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেই ,বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ যাদের সাথে ইসরায়েলের কোনো কূটনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্ক নাই ।আর একটি তথ্য হচ্ছে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয় ১৯৪৮ সালে ।

চলুন তাহলে জেনে নেই কোন পন্য গুলো ইসরায়েলের নয় কিন্তু ইসরায়েলের পন্য হিসেবে প্রচার পাচ্ছে ।

১.ইউনিলিভার/Unilever:লাইফবয়,লাক্স, ডাব,হুইল, তাজা চা, হরলিক্স ইত্যাদি পন্য ইউনিলিভারের । এই কোম্পানির জন্ম ১৯২৯ সালে । যেখানে ইসরায়েলের জন্ম ১৯৪৮সালে।ইউনিলিভারের একটি ব্রিটিশ বহুজাতিক কোম্পানি ।

২.কোকাকোলা/Coca-Cola:স্প্রাইট, কোকা-কোলা, ডায়েট কোক,ফান্টা ইত্যাদি হলো এই কোম্পানির পন্য। কোকাকোলা কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের। এই কোম্পানির জন্ম ইসরায়েলের জন্মের আগে, ১৮৮৬ সালে। যেখানে ইসরায়েল এর জন্ম ১৯৪৮সালে।

৩.নেসলে/Nestle:নেসলের জন্ম ১৮৬৬সালে। ম্যাগি,কিটক্যাট নেসলেরই একটি অংশ। কোম্পানিটি সুইজারল্যান্ডের।

৪.পেপসিকো/Pepsico:পেপসি,মিরান্ডা, সেভেন আপ,অ্যকুইফিনা, মাউন্টেইন ডিও ইত্যাদি হলো এই কোম্পানির পন্য ।এটিও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি। কোম্পানিটির জন্ম ১৮৯৩সালে। ইসরায়েলে ব্যবসা শুরু করে ১৯৯১ সালে। অনেকেই জানে যে পেপসি মানে “Pay every penny to save israil” কিন্তু যেখানে ইসরায়েল রাষ্ট্রেরই জন্ম ১৯৪৮ সালে সেখানে পেপসির নামের সাথে ইসরাইলের নাম আসার কোনো প্রশ্নই উঠে না।

৫.অরিজিনস/origins: এটি একটি কসমেটিক পন্যর কোম্পানি । অরিজিনস কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের।এর জন্ম ১৯৯০সালে।

৬.ভিটেল/Vittel: ভিটেল ফ্রান্সের কোম্পানি। এটি যাত্রা শুরু করে ১৯৯২ সালে ।

৭.ক্যালভিন কিলিয়ান/Calvin Klein:এই কোম্পানিটিও যুক্তরাষ্ট্রে।১৯৬৮ সালে যাত্রা শুরু করে।

৮.নোকিয়া/Nokia: নোকিয়া ফিনল্যান্ডের একটি প্রযুক্তি পন্যের কোম্পানি। এটির জন্ম ১৮৬৫ সালে ।

৯.ম্যাকডোনাল্ডস/ McDonalds: এই কোম্পানি ১৯৪০সালে যাত্রা শুরু করে । এটিও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ।

১০.ইন্টেল/ Intel: ইন্টেল যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান । কোম্পানিটির জন্ম ১৯৬৮সালে।

১১.আইবিএম/ IBM: আইবিএম ১৯১১সালে যাত্রা শুরু করে ।এটিও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি।

১২.স্টারবাকস কফি/ Starbuck Coffee:এটি ১৯৭১সালে যাত্রা শুরু করে । এটিও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি।

১৩.হুগো বস/ Hugo Boss: এটির জন্ম ১৯২৩সালে। এই কোম্পানিটি জার্মানির ।

১৪.ড্যানন/ Danone: ড্যানন ফ্রান্সের কোম্পানি । এটি ১৯১৯ সালে যাত্রা শুরু করে।

১৫.দ্যা টাইমস/ The Times: দ্যা টাইমস একটি সংবাদ মাধ্যম। এটির মালিকানা ইংল্যান্ডের । এটি ১৭৮৫ সালে যাত্রা শুরু করে।

১৬.টাইম/ Time:এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদ মাধ্যম । এটি ১৯২৩ সালে যাত্রা আরম্ভ করে।

১৭.ওচান/Auchan:এটি ১৯৬১সালে যাত্রা আরম্ভ করে । এই কোম্পানিটি ফ্রান্সের।

১৮.গ্যাপ/Gap:গ্যাপ ১৯৬৯সালে যাত্রা আরম্ভ করে । এটিও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি।

১৯.লরেল/L’Oréal:এটি ফ্রান্সের কোম্পানি । এটি ১৯০৯সালে যাত্রা শুরু করে।

২০.সিএনএন/CNN: সিএনএন একটি সংবাদ মাধ্যম প্রতিষ্ঠান । এটি ১৯৮০সালে যাত্রা শুরু করে । এটি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ।

২১.জনসন এন্ড জনসন/Johnson & Johnson:এই কোম্পানিটি ১৮৮৬সালে যাত্রা আরম্ভ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ।

২২. বাটা/Bata: বাটা গ্লোবালি একটি বেসরকারি মালিকানাধীন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান, যা চেক প্রজাতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাটা বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে ১৯৬২ সালে। বাটা ইসরায়েলের কোম্পানি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া একটি ভ্রান্তিকর ধারণা।

২৩. কেএফসি/ KFC:এটি যুক্তরাষ্ট্রের। এটির জন্ম ১৯৩২ সালে ।কেএফসির মালিকানা ভুক্ত আরেকটি কোম্পানি হলো পিৎজা হাট । কেএফসির মালিক হারল্যান্ড স্যান্ডার্স একজন আমেরিকান । যার ধর্ম খ্রিস্টান। ইসরায়েলীদের ধর্ম ইহুদি। সুতরাং এটি ইসরায়েলের পন্য হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না ।

এছাড়াও বেশিরভাগ পন্যেই যেগুলো ইসরায়েলের পন্য হিসেবে প্রচার পাচ্ছে সেগুলো মূলত ইসরায়েলের পন্য নয় । ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের অনবরত অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের প্রতিবাদ করা নৈতিক দ্ধায়িত্ব ।কিন্তু মুল কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বাজারে ইসরায়েলের কোন পন্যেই নেই । একারনে বাংলাদেশে ইসরায়েলের পন্যে বর্জন করার কোন যৌক্তিকতাও নেই ।

তবে এখন দেখা যাচ্ছে,  ইসরায়েলের মালিকানাধীন পন্য ভেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করে লুটপাট করা হচ্ছে, যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত একটি ঘোষণা দিয়ে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেয়া কোনগুলো ইসরায়েলের পন্য এবং কোনগুলো ইসরায়েলের পন্য নয় । এতে জনগণের মধ্যে থাকা ভ্রান্ত ধারণা দূর হবে এবং দেশের সম্পদ রক্ষা পাবে।