রাজধানীর উত্তরা এলাকায় র্যাব পরিচয়ে এক কোটি আট লক্ষ ১১ হাজার টাকা ডাকাতির চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনায় নগদ ২২ লক্ষ ১০ হাজার ৭৮০ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত ১২ লক্ষ টাকা এবং একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসসহ পাঁচ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), উত্তরা বিভাগ ও উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো—
১. মো. হাসান (৩৫)
২. গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০)
৩. শেখ মো. জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩)
৪. মো. ইমদাদুল শরীফ (২৮)
৫. মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭)
পুলিশ জানায়, গত ১৪ জুন সকাল ৮:৫৫ মিনিটে নগদ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন তার বাসা থেকে এক কোটি আট লক্ষ টাকা নিয়ে চার কর্মচারীসহ দুটি মোটরসাইকেলে নগদের উত্তরা অফিসে যাচ্ছিলেন। পথে ১২ ও ১৩ নম্বর রোডের সংযোগস্থলে কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাসে থাকা ‘র্যাব’ লেখা কটি পরিহিত, মুখোশধারী ৬/৭ জন অস্ত্রধারী তাদের গতিরোধ করে। দৌঁড়ে পালাতে গেলে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তিনজন কর্মচারীকে গাড়িতে তুলে হাত-পা বেঁধে মারধর করে তুরাগ থানার বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে যায় ডাকাতরা।
এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়েরের পর ডিবি ও উত্তরা বিভাগের যৌথ অভিযানে রহস্য উদঘাটনে গতি আসে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মাইক্রোবাস ও চালককে শনাক্ত করে খিলগাঁও এলাকা থেকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় মো. হাসানকে। তার স্বীকারোক্তিতে সবুজবাগের স্বপনের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার হয় ডাকাতির সময় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস।
এরপর অভিযান চালিয়ে উত্তরা থেকে চক্রের মূলহোতা চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ১৩ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা। তার তথ্যে আদাবরের বায়তুল আমান এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় শরীফ, যার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৮ লক্ষ ৪ হাজার ৭৮০ টাকা।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট শেখ মো. জালাল উদ্দিনকে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। জালাল নিজেকে ‘ক্যাপ্টেন জালাল’ হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং ডাকাতির পরদিন ১২ লক্ষ টাকা নিজের ব্যাংক একাউন্টে জমা করেন, যা জব্দের প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে, এয়ারপোর্ট রেল স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় চক্রের সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপনকে। তার হেফাজত থেকে উদ্ধার হয় র্যাব-পুলিশের নকল আইডি কার্ড, সেনা লোগোযুক্ত মানিব্যাগ, সিগনাল লাইট, লাঠি, চেকবই ও মোবাইল।
পুলিশ সূত্র জানায়, এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে দেশব্যাপী ডাকাতি করে আসছিল। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং বাকি টাকা ও জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।