এসএসসি অর্থাৎ সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা। বলা হয় একজন শিক্ষার্থীর সুদীর্ঘ দশ বছরের সাধনা। যার সাথে জড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ এ কোন পথে যাবে তার নির্ধারণ হয় এই এসএসসি থেকেই। আর এই এসএসসি পরীক্ষাকে ঘিরে চলে নানা জল্পনা কল্পনা,গুজব এবং নানা কথপোকথন।
বাংলাদেশের অন্যতম একটি পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি)। প্রতিবছর প্রায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চমাধ্যমিকের দিকে ধাবমান হয়। এই এসএসসির রেজাল্ট যা শিক্ষার্থীদের এডমিশন,চাকুরিসহ জীবনের নানাক্ষেত্রে প্রভাব রাখে। শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রভাব রাখা এই পাবলিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জীবনকে নানাভাবেই প্রভাবিত করে। প্রতিবছর লাখখানেক পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু যারা উত্তীর্ণ হয় না,তাদের কথা কি কেউ কখনো ভেবে দেখেছে?
এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের সময় দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। চারদিকে খুশির আমেজ ছেয়ে যায়। কিন্তু এরই সাথে কিছু ঘর থাকে যেখানে শোকের মাতম।
কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়ায় বা এসএসসি তে উত্তীর্ণ না হওয়ায় সে ঘরের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এভাবে ঝরে যায় বহু শিক্ষার্থীর প্রাণ। ফেইল করার কারণে একবছর পিছিয়ে আবার পরীক্ষা দিতে হয়। তাই ঝরে পড়ে হাজারো শিক্ষার্থী।
এসএসসিতে ফেইল করা লজ্জার বিষয়। কিন্তু এর কারণ কি? এসএসসির প্রস্তুতি চলতে থাকে দীর্ঘ ২ বছর ধরে। এরপরও শিক্ষার্থীরা ফেইল করে কেন? আর ফেইল করলেই কি জীবন দিতে হবে! এরকম নানা সমীকরণ ঘুরপাক খায় প্রতিবছর জনমনে।
২বছর বিস্তর প্রস্তুতির পর শুরু হয় এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দরকার পড়ে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে। সাধারণত এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে যেতে হলে পরীক্ষায় পাশ করে যেতে হয়। ফেইল করলে পুনরায় পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে পরবর্তী শ্রেণীতে যেতে হয়। তেমনিভাবে এসএসসিতে যদি কেউ ফেইল করে,তাহলে আবার তাকে পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে এরপর পরবর্তী শ্রেণী অর্থাৎ একাদশে যেতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে ফেইল করে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় সামন্য কারণেই ফেইল করে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। আর সেসব কারণের মধ্যে থাকে যেকোনো দুর্যোগ,প্রস্তুতিগত সমস্যা, অত্যাধিক চিন্তা,অত্যাধিক ভয় সহ নানা কারণ। এবং একটি বিষয়ে ফেইল করলেও দেখা যায় একবছরের জন্য সে পিছিয়ে যায়। ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন মানসিক চাপ। আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু শিক্ষার্থী। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। ঝরে যায় অনেকে।
এরথেকে পরিত্রাণের জন্য বিশেষজ্ঞ মহলে,শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে বহুদিন ধরেই সাপ্লিমেন্টারী ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চলছে। দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বলে পুরো এক বছরের জন্য শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাবে তা কোনো কথা নয়। তাই সাপ্লিমেন্টারী ব্যবস্থা হতে পারে অন্যতম সমাধানের পথ। যা দিয়ে রক্ষা করা যাবে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।
এসএসসি পরীক্ষায় "সাপ্লিমেন্টারী ব্যবস্থা" বলতে বোঝায়, একজন শিক্ষার্থী যদি মূল পরীক্ষায় (এসএসসি) এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়, তবে তাকে অতিরিক্ত একটি সুযোগ দেওয়া হয় সেই বিষয়গুলোতে পাশ করার জন্য—এটিই সাপ্লিমেন্টারী বা পুনঃপরীক্ষার ব্যবস্থা।
বিস্তারিতভাবে সাপ্লিমেন্টারী ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য:
1. যোগ্যতা: সাধারণত যারা ১ বা সর্বোচ্চ ২টি বিষয়ে ফেল করে, তারাই এই সুযোগ পেয়ে থাকে।
2. সময়কাল: মূল এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের কিছু মাস পর এই সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষা নেওয়া হয়।
3. উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীরা যেন পুরো বছর অপেক্ষা না করে, দ্রুত ফলাফল পেয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে বেঁচে যাবে বহু শিক্ষার্থীর প্রাণ। হতাশ না হয়ে নতুন উদ্দমে দ্রুত ভর্তি হয়ে তারা আবারও শুরু করতে পারবে তাদের শিক্ষাজীবন।
তাই দিনদিন সাপ্লিমেন্টারী ব্যবস্থার দাবি জোরদার হচ্ছে জনমনে। এসএসসি পরীক্ষার সহায়ক হয়ে সাপ্লিমেন্টারী ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য এক আশীর্বাদ স্বরূপ হবে। ফলত এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো একধাপ।
বিদেশের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থায় এই পদ্ধতি বহু আগে থেকেই রয়েছে। বাংলাদেশেও এটি চালু করা হলে তা অবশ্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে।