রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনে ট্রেন না থামায় চরম দুর্ভোগের শিকার এলাকাবাসী

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনে ট্রেন না থামায় চরম দুর্ভোগের শিকার এলাকাবাসী। যাত্রীদের জন্য বিন্দুমাত্র সুযোগ-সুবিধা নেই সেখানে। রেলওয়ে স্টেশনটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও বন্ধ অবস্থায় আছে। স্টেশনটিতে দুইটি লোকাল ট্রেন থামলেও লোকবলের অভাবে টিকিট বিক্রিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এতে একদিকে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। অন্যদিকে লোকবল না থাকায় স্টেশনের সম্পদ চুরি হয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, ১৯২৯ সালে উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয় নিমপাড়া ইউনিয়নের বরকতপুর এলাকায়, যা নন্দনগাছী স্টেশন নামে পরিচিত। চারিদিকে অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা স্টেশনটি।
৯৫ বছর আগে স্থাপিত স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে। নিয়ম অনুযায়ী, এই স্টেশনে টিকিট মাস্টার, স্টেশন মাস্টার, পোর্টারম্যান, কয়েন্সম্যান, গেটম্যানসহ প্রায় ১২ জন জনবল ছিল। কিন্তু বর্তমানে কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্ম আছে, স্টেশন ঘর আছে কিন্তু কোন লোকালয় নেই। পড়ে আছে জরাজীর্ণ ভাবে নন্দনগাছী স্টেশন। আবাসিক ভবনের ময়লা-আবর্জনা ও আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে স্টেশনের আশপাশের এলাকা। স্টেশনে চা দোকানদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ১৫ বছরের বেশি হলো দেখছি এই স্টেশন বন্ধ হয়ে আছে। তবে স্থানীয় মুরুব্বিদের থেকে জানা যায় রাজশাহীর মধ্যে এটিই ছিল একটি ঐতিহ্যবাহী স্টেশন যা লাইনের হাট নামেও পরিচিত ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য করতো এই অঞ্চলের জনগণ অন্য অঞ্চলের সাথে। যার কেন্দ্র বিন্দু ছিল এই নন্দনগাছী রেলস্টেশনটি। ট্রেনের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলে উৎপাদিত গুড় বিভিন্ন কৃষি পণ্য,বিভিন্ন প্রসাধনী আনা-নেওয়া করতো তারা। আবার তারা সেই ঐতিহ্য ফিরে পেতে চায়।

এর মাঝখানে পোর্টারম্যান পদে ১ জন কর্মকর্তা ছিলেন এখন তাও নেই। তিনি সরদহ রেল স্টেশনে চলে গেছে। শূন্য হয়ে আছে এই স্টেশনের ভবন গুলো। স্থানীয়রা জানান, রাত হলেই ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে স্টেশনে। অপরাধীরা এসে আশ্রয় নেয় সেখানে। উপজেলার মাদক বিক্রির স্পট এটি। এ ছাড়া অযত্ন-অবহেলায় স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি নষ্টও হচ্ছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরদহ স্টেশন মাস্টার ফরহাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে এই রুটে চলাচলকারী ২ টি ট্রেন এই স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। টিকিট মাস্টার না থাকায় যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন না। এই স্টেশন থেকে ট্রেন ভ্রমণ করতে গেলে টিকিট আনতে হয় ১০ কিলোমিটার দূরের সরদহ অথবা ১২ কিলোমিটার দূরের আড়ানী স্টেশন থেকে। স্থানীয় লোকজন নিজেরা গিয়ে, কখনো যানবাহনের চালকদের মাধ্যমে টিকিট কেটে রেখে এই স্টেশন থেকে ট্রেন ভ্রমণ করছেন।

চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি চাকরির সকল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানী ঢাকাতে।এতে তাদের প্রতি সপ্তাহে,প্রতিমাসে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু চারঘাট উপজেলাবাসীর সবচেয়ে কাছের স্টেশন হলো নন্দনগাছী স্টেশন কিন্তু এখানে  থামেনা কোন আন্তঃনগর ট্রেন।তাই তাদের ৩০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী স্টেশনে গিয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে হয় ঢাকায়। যা তাদের কাছে খুবই দুর্ভোগ। এবং ঢাকা থেকে পরীক্ষা শেষ করে আবার তাদের রাজশাহী এসে নামতে হয় গভীর রাতে। তখন তারা বাড়ি ফিরতে হলে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। কিন্তু যদি নন্দনগাছি স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনটি থামতো তবে তারা ১০ থেকে ১৫ টাকায় বাড়ি পৌঁছে যেত ভোগান্তি ছাড়াই। পরিশেষে বলে এ ভোগান্তি থেকে তারা নিস্তার পেতে চায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, টিকিট না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। স্টেশনটি দ্রুত চালু করে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করার দাবি এলাকাবাসীর। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চারঘাট উপজেলার সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, আবাদযোগ্য ভূমি চাষাবাদের অভাবে যেমন পরিত্যক্ত হয়ে যায়, এ স্টেশনের অবস্থাও তাই হয়েছে। স্টেশনটি চালু হলে এই অঞ্চলের যাত্রীদের খুব উপকার হবে।

স্থানীয় জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায়,তারা খুব শীঘ্রই নন্দনগাছী স্টেশনটি পূর্ণাঙ্গ চালু ও আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজের জন্য একটি মানববন্ধন কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছে। খুব শীঘ্রই পরিকল্পনাটি তারা বাস্তবায়ন করবেন।তারা জানান স্টেশনটি চালু হলে চারঘাটবাসীর জীবনমান উন্নয়ন হবে। চারঘাটের মানুষের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে এখন নন্দনগাছী স্টেশনটি চালু করা বিষয়ে।

স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, এই স্টেশন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু থাকলে এই অঞ্চলের মানুষ খুব সহজেই আন্তনগর ট্রেনে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সহজে যাতায়াত করতে পারতেন।

ঈশ্বরদী পাকশী রেলওয়ের কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জনবল সঙ্কটের কারণে নন্দনগাছী স্টেশন সহ আরও অনেকগুলো স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কবে এর সমাধান হবে তা জানা নেই বলে তিনি জানান।