কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভিক্টোরিয়া কলেজের এক ছাত্রের মায়ের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা ভুল বোঝাবুঝি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাবের কারণে আরও জটিল হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়।
২১ মার্চ রাত ৯টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিক্টোরিয়া কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। স্বজন হারানোর বেদনা ও হতাশার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে। অনেকে এই পরিস্থিতিকে চিকিৎসা সংক্রান্ত অবহেলা হিসেবে ধরে নেন, যা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। এ সময় ক্ষোভে কিছু ব্যক্তি হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তার ও শিক্ষার্থীদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
রাত ১০টা ২০ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। তবে তখনো আবেগপ্রবণ জনতা হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করছিলেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগছিল।
সেনাবাহিনী প্রথমে মৌখিকভাবে সবাইকে শান্ত করতে চেষ্টা করে, কিন্তু উপস্থিত অনেকেই তখনও মর্মাহত ও উত্তেজিত ছিলেন। ভুল বোঝাবুঝি ও তীব্র আবেগের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে। এর মধ্যে কিছু ব্যক্তি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে সম্পত্তির ক্ষতি হয়। এমনকি সাংবাদিকদের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যদিও সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বারবার সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়, তবু উত্তেজনা কমছিল না। ফলে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং কিছু চিকিৎসক ও সাংবাদিক আহত হন।
যখন পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং স্বাভাবিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন টহল কমান্ডার হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতামূলক ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন।
পরপর পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলির শব্দে উপস্থিত সবাই সতর্ক হন এবং পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে আসে। এতে মূলত সবাই নতুন করে ভাবতে শুরু করেন এবং সংঘর্ষ বন্ধ হয়। এই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারত, যা বড় ধরনের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতির কারণ হতে পারত।
পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং আরও সেনা সদস্য মোতায়েন করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের মধ্যে হাসপাতালের সম্পত্তির ক্ষতি, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এদিকে, আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য মৃতদেহ হস্তান্তর সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। সকাল ১১টায় সাংবাদিকরা একটি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন, যেখানে তারা হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সেনাবাহিনীর দক্ষ পদক্ষেপের ফলে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে এবং হাসপাতালের শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপিত হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টহল দল সারারাত হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান নেয়, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি পুনরায় সৃষ্টি না হয়।
বর্তমানে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। এই ঘটনাটি বুঝিয়ে দেয়, চিকিৎসা সংক্রান্ত সচেতনতার অভাব ও আবেগের মাত্রাতিরিক্ত বিস্ফোরণ কিভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। তবে সেনাবাহিনীর সুপরিকল্পিত পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে, যা সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।