টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার দীঘলকান্ন্দি ইউনিয়নের কুরমুশি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের একমাত্র ছেলে মোঃ নাজির উদ্দিন।
ঘরে বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী আর তিন বছরের কন্যা সন্তান নিয়ে তাদের ছোট্ট একটি সংসার। সচ্ছলভাবে সংসার চালাতে নিজ এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করার উদ্যোগ নেন নাজির উদ্দিন। কিন্তু সফল হননি। তাই বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকার একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ হয়।
ওই প্রতিষ্ঠানের মামুন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তাকে রাশিয়ায় পাঠাতে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
নাজির উদ্দিনকে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির কথা বলে পাঠানো হয় রাশিয়ায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পাঠানো হয় সামরিক প্রশিক্ষণে। ১৪ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর নাজির উদ্দিনকে পাঠানো হয় রণাঙ্গনে।
গত ১৫ ডিসেম্বর নাজির উদ্দিন রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। দুবাই হয়ে রাশিয়া পৌঁছান তিনি। তারপর একটি ক্যাম্পে কয়েকদিন রাখা হয়। কিছুদিন পর সেখান থেকে বিমানে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। ওই জায়গায় ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন সীমান্তে নেওয়া হয় তাদের। গত ১৬ এপ্রিল সকালে নাজির উদ্দিন টেলিফোনে কান্না করে বাবা ও স্ত্রীকে জানান, তাদের ইউক্রেনের সম্মুখযুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিনের পর থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নাজির উদ্দিনের।
নাজির উদ্দিনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিন বলেন,
আমার ছেলে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশা নিয়ে রাশিয়া গেছে। ১২ লাখ টাকা সুদে এনে বিদেশে পাঠিয়েছি। তাকে কেন যুদ্ধে পাঠানো হলো? তাকে যারা চাকরি দেওয়ার মিথ্যা কথা বলে রাশিয়া নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছে, তাদের বিচার চাই। আমার ছেলেকে ফেরত চাই।
নাজির উদ্দিনের স্ত্রী কুলসুম বেগম জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নাজির। রাশিয়া যাওয়ার পর তাকে যখন যুদ্ধের প্রশিক্ষণে পাঠানোর কথা জানতে পারেন, তখন থেকে প্রতিদিন টেলিফোন করে কান্নাকাটি করতেন। ১৬ এপ্রিলের পর থেকে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, সে সম্পর্কেও কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমার একমাত্র মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। সেও প্রতিদিন বাবার খবরের আশায় মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সরকারপ্রধানের কাছে আমার দাবি, আমার স্বামীকে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।