কোরবানির ইতিহাস ও ফজিলত  

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কোরবানি। এটি কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং তাকওয়া, আনুগত্য ও আত্মত্যাগের এক অনন্য নিদর্শন। প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহার দিনে বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন। এর পেছনে রয়েছে এক গভীর ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপট।

কোরবানির ইতিহাস

কোরবানির সূচনা হযরত আদম (আ.)-এর সন্তান হাবিল ও কাবিলের সময় থেকে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তারা উভয়ে কোরবানি দেন। হাবিলের কোরবানি কবুল হয় কারণ তিনি তা নিষ্ঠা ও তাকওয়ার সঙ্গে করেছিলেন।

এরপর কোরবানির মূল শিক্ষা আমাদের সামনে আসে হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর মাধ্যমে। তিনি আল্লাহর আদেশে নিজ পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে পরীক্ষা, আর ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) উভয়েই তাতে উত্তীর্ণ হন।

কোরআনে বলা হয়েছে:

“অতঃপর আমি তাকে একটি বড় কোরবানির মাধ্যমে মুক্ত করলাম।”
— সূরা আস-সাফফাত (৩৭:১০৭)

এই ঘটনার স্মরণেই মুসলিম বিশ্বে কোরবানি পালন করা হয়।

কোরবানির ফজিলত

কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়, বরং তা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের একটি পন্থা। এতে নিহিত আছে ধৈর্য, উদারতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অঙ্গীকার।

আল কোরআনে বলা হয়েছে:

“আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর গোশত কিংবা রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।”
— সূরা আল-হাজ্জ (২২:৩৭)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“কোরবানির দিনে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কোরবানি করা। কিয়ামতের দিন এ পশুগুলোর শিং, রোম, ও ক্ষুরসহ উপস্থিত হবে।”
— (তিরমিজি, হাদিস: ১৪৯৩)

কোরবানির সামাজিক তাৎপর্য

কোরবানির মাধ্যমে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে ভাগ পায় এক আনন্দে। এটি সামাজিক সাম্য, সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। গরিবদের মাঝে মাংস বিতরণ করাও ইসলামের একটি বড় আদর্শ।

উপসংহার:

কোরবানি আমাদের শেখায় আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের শিক্ষা। এটি কেবল একটি ইবাদত নয়, বরং ইসলামের মূল দর্শনের একটি বাস্তব রূপ।