চুরির ও গৃহবধুর গোসলের ভিডিও ধারণের অপবাদ দিয়ে রাজবাড়ীতে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে ভ্যান চালককে ৩০ জনে পিটিয়ে হত্যা। ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, ৪ জন গ্রেপ্তার।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার রাজাপুরে শাহীন শেখ ওরফে রুপল শেখ (২৭) নামে এক ভ্যান চালককে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রুপল শেখ সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের জিন্নাহ শেখের ছেলে। তিনি ভ্যান চালিয়ে ও শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) ভোরে রাজবাড়ী থানা পুলিশের অভিযানে সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের রুকমান বিশ্বাসের ছেলে মোঃ জহিরুদ্দিন বিশ্বাস (৬৫), মৃত ফেলু বিশ্বাসের ছেলে মোঃ মৈজদ্দি বিশ্বাস (৫৫), ফরহাদ বিশ্বাস (৪৫), খালেক মোল্লার ছেলে মোঃ মুন্নু মোল্লা (৫০) কে গ্রেপ্তার করে।
শুক্রবার (১৭ মে) সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাকে শাম বিশ্বাসের বাড়ীতে আটকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
রুপলের মামা মোঃ কালাম মোল্লা বলেন, শুক্রবার রাতে গ্রাম্য শালিস হওয়ার কথা ছিল। গত ১৬ মে বিকাল ৫ টার সময় বিকেলে ভাগ্নে রুপল শেখকে তার বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে শামসুদ্দিন ওরফে শাম বিশ্বাসের বাড়ীর ভিতর নিয়ে যায়। তার বাড়ীর আঙ্গিনায় মিথ্যা চুরি ও গৃহবধুর গোসলের ভিডিও ধারণের অপবাদ দিয়ে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে রুপল শেখ কে এলোপাথারী ভাবে মারধর করে। মারধরে রুপলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রুপলকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন রুপলকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতে পুলিশ আমাকে সই করতে বলেছে, কাগজে আমি সই করেছি। তবে আমি কারো বিরুদ্ধে মামলা দেইনি।
নিহত রুপলের বোন স্মৃতি ও বীথি বলেন, রাজাপুর গ্রামের প্রবাসী রাকিবুলের স্ত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণ ও মোটর চুরির অপবাদ দিয়ে গত মঙ্গলবার রাকিবুলের ভাই রাফিজুল ও তার পরিবারের লোকজন রুপলকে মারধর করেন। সেদিন মার খেয়ে রুপল বুধবার সকালে ঢাকা চলে যায়। স্থানীয় মাতবররা শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিবারের সদস্যরা তাকে ফোন করে বাড়ি আনেন। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে শাম বিশ্বাস, মকিম, মোক্তার, রাফিজুল, কচি, রাকিবুল, রাসেল, সৌরভসহ ৭-৮ জন এসে রুপলকে বসত বাড়ীর ঘরের ভেতর থেকে ধরে নিয়ে তাদের বাড়ীতে আটকে রাখে। তারা পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার ভাইয়ের ভিডিও করা ফোন ছিল না। ও বাটন ফোন চালাতো, তাহলে ভিডিও কিভাবে করলো। আমরা ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার দাবী করছি।
স্থানীয় আব্দুল মান্নান খান বলেন, শুক্রবার রাতে শালিসের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। সে টার্চ ফোন চালাতো না, সন্দেহ বশতঃ তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। আমরা সঠিক তদন্ত পুর্বক বিচার দাবী করছি।
রাকিবুলের মা রাহেলা পারভীন বলেন, গৃহবধুর ভিডিও ধারণ ও মোটর চুরির কথা স্বীকার করে। তাই তাকে বাড়ী থেকে ধরে এনে মারধর করে। এসময় ৩০-৩৫জন যুবক ছিল। আসলে সবাই মিলে মারধর করে। এ কারণে হয়তো মারা গেছে। কারা ছিল না প্রকাশ করেন না। তবে ঘরে আটকে নয় বাইরে মারধর করে এবং অসুস্থ হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ডেকে এনে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী গৃহবধু বলেন, স্বামী বাড়ীতে না থাকায় আমার জানালায় টোকা দেওয়া, গোসলের ভিডিও ধারণ, মোটর চুরি করাসহ নানা ভাবে উত্যক্ত করছিল। তবে ভিডিও ধারণ করার পর তিনি সে ভিডিও দেখেননি বলেও প্রকাশ করেন।
এ ঘটনায় শনিবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের নসের উদ্দিন মোল্লার ছেলে মোঃ কালাম মোল্লা (৫৪) বাদী হয়ে ১০জনের নাম উল্লেখ করাসহ ৭-৮জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুর রহমানের সাথে কথা বলতে থানায় গেলেও পাওয়া যায়নি। তিনি ফোনও রিসিভ করেননি।
রাজবাড়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই রুপলের মামা কালাম মোল্লা বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার চার আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য অসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গৃহবধুর গোসল ভিডিও ধারণের অপবাদে ভ্যান চালককে পিটিয়ে হত্যা - মামলা ১০, গ্রেপ্তার ০৪
শেয়ার করুন




