১৬ জুলাই (বুধবার) রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরেই চলমান চিকিৎসা সেবার অব্যবস্থাপনা, যন্ত্রপাতির অভাব ও চিকিৎসক সংকট নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে। এসব অনিয়ম ও দুরবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সম্প্রতি একদল তরুণ সচেতন নাগরিক রাজশাহীর সিভিল সার্জনের কাছে ১২ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করেছেন।


স্মারকলিপিতে হাসপাতালটির বিভিন্ন অনিয়মের পাশাপাশি আধুনিক, মানবিক ও রোগীবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।


স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং যেগুলো আছে সেগুলো নষ্ট হওয়ার কারণে রোগীদের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়, যেখানে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য প্রকট। অনেক সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হয়, আবার রোগীদের বেশীরভাগ রেফার করা হয় — যার ফলে বাড়ছে জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি।


আউটডোর বিভাগে চিকিৎসকদের উপস্থিতি ও দায়িত্বকালও অনিশ্চিত, যার ফলে রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সেবা পান না বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও, লিফট না থাকায় বৃদ্ধ ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের তৃতীয় তলায় নেওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।



স্মারকলিপিতে উল্লেখযোগ্য ১২ দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:


১. আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও দাঁতের চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত সংযোজন।

২. প্রতিটি রোগের জন্য নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি।

৩. কুকুর ও সাপের কামড়ের ভ্যাকসিন সার্বক্ষণিক মজুদ।

৪. রোগীদের যাতায়াতের সুবিধায় লিফট স্থাপন।

৫. আউটডোরে ডাক্তারদের নাম ও ডিউটি সময় প্রদর্শনের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা।

৬. জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

৭. রোগীর অবস্থা অনুযায়ী যথাযথ রেফার পদ্ধতি চালু রাখা।

৮. প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা।

৯. রোগীদের হয়রানি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।

১০. উন্নত ও মানবিক চিকিৎসাসেবার নিশ্চয়তা।

১১. সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসিয়াল পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক।

১২. ডায়াগনস্টিক দালালদের প্রতিহত করা।কারণ মেডিকেলে রোগীর চেয়ে ডায়গনস্টিকদের দালালদের সংখ্যা বেশি। 


স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, “ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দালালদের দৌরাত্ম্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, হাসপাতালটির পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রোগীর চেয়ে দালালের সংখ্যা বেশি—এটা কোনো সরকারি হাসপাতালের চিত্র হতে পারে না।”



স্মারকলিপি গ্রহণ করে রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন  ডাঃ এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, “এই দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী। আমরা এসব বিষয়ে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাথে যোগাযোগ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়াও তিনি আমাদের জানান তিনি গত রবিবারেই মেডিকেল পরিদর্শন করে গেছেন এবং যাবতীয় বিষয় তাদের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি আমাদের আরও আশ্বস্ত করেন আমরা আপনাদের সেবার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবো এবং আপনারা চারঘাট বাসী আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করবেন এবং আমাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।তরুণদের এই মহতী উদ্যোগ তিনি নজীরবিহীন এক ইতিহাস হয়ে থাকবে বলে আখ্যায়িত করেছেন ।”


স্মারকলিপি প্রদানকারীদের মধ্যে তারেকুল ইসলাম জনি বলেন, চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গঠনমূলক যৌক্তিক সংস্কারের লক্ষ্যে আমাদের ১২ দফা দাবি সিভিল সার্জন মহোদয়কে স্মারকলিপির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। তিনি সকল বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য পেশ করেছেন এবং সর্বশেষে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন এবং আমাদেরকে সহযোগিতার জন্য আহ্বান করেছেন । চারঘাটবাসীর তরুণদের উদ্যোগে এমন মহতী কাজ করার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

উক্ত স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন তারেকুল ইসলাম জনি, কামরুজ্জামান স্যার, মাইনুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান, সাব্বির আজম, তামিম আহমেদ, শিমুল ইসলাম, সোহান ইসলাম, জুবায়ের বিন জাহাঙ্গীর, আতিক হাসান, আশরাফুল ইসলাম বাবু সহ প্রমুখ 

চারঘাটবাসীর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আধুনিক, দালালমুক্ত এবং সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করবে—যেখানে সাধারণ মানুষ যেন সম্মানজনক ও কার্যকর চিকিৎসাসেবা পায়।