বাংলাদেশে প্রায় ২৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করছে। এই বিপুল সংখ্যক তরুণের ভবিষ্যৎ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আটকে আছে। শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ ও বৈষম্যমূলক নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার যে গুণগত মান থাকা দরকার, তা অর্জিত হচ্ছে না।
প্রথমত, **সেশনজট** জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থায়ী অভিশাপ। একটি অনার্স কোর্স যেখানে ৪ বছরে শেষ হওয়ার কথা, সেখানে ৫-৬ বছর সময় লেগে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা মাঝপথে হতাশ হয়ে পড়ছেন। কর্মজীবনে প্রবেশ করার উপযুক্ত সময়েই তারা স্নাতক শেষ করতে পারছেন না, যার ফলে বিসিএসসহ প্রতিযোগিতামূলক চাকরির সুযোগ থেকেও অনেক সময় তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
দ্বিতীয়ত, **চাকরির বাজারে বৈষম্য**। অনেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ্যেই লেখা থাকে—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা অযোগ্য বা অগ্রাধিকার পাবে না। এটা কি সরাসরি বৈষম্য নয়? একটি রাষ্ট্র কীভাবে তার নিজস্ব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন আচরণ করতে পারে?
তৃতীয়ত, **পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব**। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর অধিকাংশেই নেই মানসম্মত ক্লাসরুম, গবেষণার সুযোগ, অনলাইন লার্নিং, কিংবা পর্যাপ্ত শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা হয় আত্মনির্ভর হয়ে পড়ছে, নয়তো গাইডবইনির্ভর।
এছাড়াও **প্রশাসনিক জটিলতা ও স্বচ্ছতার অভাব** শিক্ষার্থীদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলছে। রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্ব, রি-চেক করার অনিশ্চয়তা, অভিযোগ করলে প্রতিকারহীনতা—সব মিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মানেই যেন লড়াইয়ের আরেক নাম।
**জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবহেলার শেকড়টা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে রয়ে গেছে।** রাজধানী বা মেট্রোপলিটন শহরের বাইরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা যেন কেবল ‘সংখ্যা বাড়ানো’র উপাদান হয়ে আছেন, গুণগত শিক্ষার ভাগীদার নয়।
তাই এখন সময় এসেছে এই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলে পৌঁছানোর। শুধু পরিসংখ্যানে নয়, বাস্তব উন্নয়নে—অধিকতর বরাদ্দ, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা এবং চাকরির ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি এই রাষ্ট্রের দায় পূরণ করতে হবে।
**শেষ কথা,** জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি অব্যাহতভাবে বঞ্চনার শিকার হতে থাকেন, তবে একসময় এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীই রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এখনই সময়, তাদের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের সূচনা করার।