ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পূর্ববিরোধের জের ধরে টানা চারদিন দুই ‘গোষ্ঠীর’ মধ্যে সংঘর্ষ চলছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পূর্ববিরোধের জের ধরে টানা চারদিন দুই ‘গোষ্ঠীর’ মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষে মিয়াজুল হোসেন (৫০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। 

বুধবার (১৪ মে) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। মৃত্যুর খর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে র‌্যাব-পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়নি। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে র‌্যাব-পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের ‘চান্দের বাড়ি গোষ্ঠী’ ও ‘ছলিম বাড়ির গোষ্ঠী’র মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। চান্দের বাড়ির গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য তকদির হোসেন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোবারক হোসেন। সলিম বাড়ির গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার, সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মিয়া, সাইদ মিয়া ও বিএনপির নেতা কামাল হোসেন। 

গত ১২ মে রাত থেকে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পূর্ব বিরোধের জেরে বুধবার (১৪ মে) বেলা ২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। এ সময় টেঁটা, বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে ১২ থেকে ১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে এলাকাজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। 

বুধবার (১৪ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের নাটাই গ্রামে ওই সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষটি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। সংঘর্ষে ‘দাঙ্গাবাজরা’ বাড়িঘরে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নাটাই এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় চান্দের বাড়ির মিয়াজুল হোসেন আহত হন। 

স্থানীয়রা সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিয়াজুলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। আহতরা ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন। 
মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে অন্তত ১৫টি বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ‘চান্দের বাড়ির গোষ্ঠী’র সদস্য ও নাটাই গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে মিয়াজুল হোসেন সদর উপজেলার সিএনজি পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাজুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আনার পর ওই ব্যক্তির শরীরে উচ্চরক্তচাপ পাওয়া গেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।

সদর থানার ওসি মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘গোষ্ঠীগত বিরোধ ও দ্বন্দ্বের জের ধরে চান্দের বাড়ির গোষ্ঠী ও ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত একজনের মৃত্যুর খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলে র‌্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভোর রাতেও কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।