বগুড়ার আদমদীঘিতে জাল দলিল সৃষ্টি করে ই-নামজারি করার পর জমি বিক্রি চেষ্টার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে

বগুড়ার আদমদীঘিতে জাল দলিল সৃষ্টি করে ই-নামজারি করার পর জমি বিক্রি চেষ্টার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে এমন একটি ঘটনা ধরা পড়লেও আইনি কোন ব্যবস্থা না নিয়েই জাল দলিলের দাতাকে রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দেওয়া সহ  বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী একই রকম ঘটনায় দলিল দাতা ও লেখকসহ আট জনের বিরুদ্ধে সাব-রেজিস্ট্রার মুদাচ্ছির হাসান নিজেই বাদী হয়ে একটি প্রতারণার মামলা দেন। এর মাত্র তিন মাস পর একই রকম ঘটনা ধরার পরেও জাল দলিলের এক দাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের ভেনল্যা গ্রামের মৃত খোয়াজ উদ্দিন আকন্দের ছেলে আফাজ উদ্দিন মাস্টার জাল দলিল মূলে আড়াইল মৌজায় ১৩ শতক সম্পত্তি বিক্রির উদ্দেশ্যে দলিল লেখক আলমগীর হোসেনের কাছে যান। তিনি (আলমগীর) দলিল লেখার কাজ সম্পন্ন করে তাকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। কাগজপত্র যাচাই বাছাই করতে গিয়ে দলিলের সার্টিফাইড কপি জাল সন্দেহ হলে সাব-রেজিস্টার তার দলিল রেজিস্ট্রি না করে কাগজপত্র আটকে দেন। এ নিয়ে সেখানে প্রায় দেড় ঘন্টা দেন দরবার চলে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ বা মামলা না দিয়েই রহস্যজনকভাবে তাদের ছেড়ে দেন। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখক সমিতির এক সদস্য বলেন, সম্প্রতি আদমদীঘি সদর ইউনিয়নের কুসুম্বী মৌজায় সরকারি খাস সম্পত্তি প্রতারনার মাধ্যমে জাল দলিল সৃষ্টি করে ই-নামজারী করার পর ওই সম্পত্তি তিন পুত্রের নামে হস্তান্তর করতে গিয়ে আদমদীঘি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আটক হয় আব্দুর রহমান নামের এক দলিল দাতা। ওই দিন তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জড়িত আরো ৮জনের নামে মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় জড়িতদের আটকের পর সাব-রেজিস্টার কেন তাদের ছেড়ে দিলেন? বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। 
জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা আহসান হাবীব নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, দুটি ঘটনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অগোচরে হয়তো সাব- রেজিস্ট্রার অফিসে অনেক ঘটনায় ঘটে। সাব রেজিস্ট্রারের উদাসীনতার কারণে পার পেয়ে গেল প্রতারকের দল।
জানতে চাইলে উপজেলা সাব-রেজিস্টার মুদাচ্ছির হাসান বলেন, দলিলের সার্টিফাইড কপি জাল সন্দেহ হওয়ার পর তাদের আটকে দেওয়া হয়। এরপর এসিল্যান্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে তারা যে যার মতো চলে গেছেন। তাদের নিয়ে দেন দরবার করা হয়েছে বিষয়টি সঠিক নয়। এদিকে মাত্র তিন মাস আগে একই ঘটনায় এক প্রতারকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে তিনি আইনি পদক্ষেপ নিলেও এই ঘটনায় কেন মামলা দিলেন না? এই বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের ঘটনাটি ছিলো জাল দলিল সৃষ্টি করে ই-নামজারী করার পর সরকারি খাস সম্পত্তি প্রতারনার মাধ্যমে হস্তান্তরের চেষ্টা। যে কারণে আমি নিজেই মামলা করেছিলাম। আর এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তির ঘটনা হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে এসিল্যান্ড মহোদয়কে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জানিয়েছিলাম। তিনি ব্যবস্থা নেয় নি। এছাড়া জাল দলিল দিয়ে এসিল্যান্ড অফিস থেকে কিভাবে খারিজ হয় এই বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের দেখার জন্য অনুরোধও করেন। 
এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা সুলতানা বলেন, তাদের কাগজপত্র আটকে দেওয়ার পর বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছিলো। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সাব-রেজিস্ট্রারকে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি ধারাবাহিক ভূমি আইনে প্রতারণার মামলা দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। কেন ছেড়ে দিলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। জাল দলিলে খারিজ হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৩৬৬ (৯-১) ২৪-২৫ সনের নামজারি আবেদনের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে সঠিক থাকায় নামজারি আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছিলো।