দুই দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ২২ তম দিনে আজ বুধবার (১৮জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানিকগঞ্জ সদরের তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মকর্তা খুরশীদা রহমান বলেন,দয়া করে আমাদেরকে আওয়ামী লীগের ট্যাগ দিবেন না,বিগত সরকারের রেখে যাওয়া আবর্জনাও বলবেন না। বিগত সরকারের ১৬ বছরে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পাশে বসিয়ে আমাদেরকে এভাবে আবর্জনা বা দোসর বলতে পারেন না। তিনি আরো বলেন-৭ বছরে মেধা, যোগ্যতা,শ্রম, কর্তব্য নিষ্ঠা ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে জনগণের জন্য কাজ করেছি। কোনো দলের পক্ষে নয়,দেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমাদেরকে বাদ দেওয়া চলবে না।আমরা রাষ্ট্রের সব নিয়মকানুন মেনেই এই প্রকল্পে নিয়োগ পেয়েছি।তখন বলা হয়েছিল আমাদেরকে নিয়ে রাষ্ট্র ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিবে।সেই আশায় এতদিন ধরে ধৈর্য সহকারে কাজ করে যাচ্ছি।তাই, আমাদের চাকুরি স্থায়ী করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। তিনি আরো বলেন, এতদিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিলেও দায়িত্বশীল কেউ যোগাযোগ করেনি।টানা চারদিন না খেয়ে আমরা এখানে ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে হামলার শিকার হয়েছি। অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরকেও হামলা থেকে রেহাই দেওয়া হয় নাই। গত ০১ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেই কিন্তু আমাদের সাথে কথা না বলেই বিদায় করে দেয়।তিনি আরো বলেন,৩ ধাপে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ পেয়েছি। সরকারি চাকরির বয়স পার হয়ে যেতে পারে বলে আমাদের চাকুরি রাজস্বভুক্তির কথা বলে বিভিন্ন সময়ে বেতন ও ভাতা কর্তন করে নেয়া হয়েছে।সেই টাকা কোথায় গিয়েছে কোনো হিসাব নাই। আমাদেরকে আওয়ামী দোসর ট্যাগ দেওয়া অন্যায়,আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চাই। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কুমিল্লার গোমতী উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা শান্তা ইসলাম।তিনি বলেন, আর কত দিন আমরা রাস্তায় বসে থাকবো,এ চাকুরি আমাদের রক্তের সাথে মিশে গেছে। আমাদের প্রায় ২০০০কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাদ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নতুন লোকবল নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। আমাদের সস্মান ও জীবিকা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র মেনে নিব না।আমরা রাষ্ট্রের কর্মী হিসাবে বাঁচতে চাই। উল্লেখ্য যে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত তথ্য আপা প্রকল্পে (২য় পর্যায়) কর্মকর্তাদের সমগ্রেডে পদসৃজনপূর্বক রাজস্ব খাতে স্থানান্তর এবং বিভিন্ন সময়ে কেটে নেয়া বেতন ও ভাতাগুলো অবিলম্বে পরিশোধের দাবিতে ঈদ উল আজহার আগে গত ২৮ মে থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। এমনকি পবিত্র ঈদুল আজহার দিনও তারা প্রেসক্লাবের সামনেই ছিলেন কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। দাবি আদায়ে ০১ জুন পুলিশের কয়েক দফা বাধা পেরিয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। সেদিন শেষ বিকালে পুলিশ তাদেরকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেয়। আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, তাদের চাকুরি স্থায়ী করণের কথা বলে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রতিমাসে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ২৪০০ টাকা এবং সহকারীদের কাছ থেকে ১৩৯০ টাকা করে কেটে নেয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ৪৯২ টি উপজেলা তথ্য কেন্দ্রে ১জন করে তথ্য সেবা কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড),দুজন তথ্যসেবা সহকারী (১৬তম‌ গ্রেড) ও একজন করে অফিস সহকারী (২০তম গ্রেড) মিলিয়ে প্রায় ১৯৬৮ জন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন। তৃণমূল নারীদের স্বাস্থ, শিক্ষা, কৃষি,আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার পরিকল্পনা এবং সাইবার সিকিউরিটি -এই আটটি বিষয়ে জরুরি তথ্য সরবরাহ ও সহায়তা দিয়ে আসছেন তথ্য আপা প্রকল্পের প্রায় দুই হাজার কর্মী। সভাপতির বক্তব্যে আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক সঙ্গীতা সরকার বলেন, আজকের মধ্যে আমাদের দাবি না মানলে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো। আমাদের সহকর্মীরা এখন সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে নিজ গৃহ ছেড়ে আমরা ২২ দিন ধরে এখানে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে চলেছি। আমাদের মধ্যে অনেক প্রসূতি,দুগ্ধদানকারী মা ও গর্ভবতী নারী রয়েছে । অনেকেই ডায়রিয়া ,খোসপ্যাচড়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পরেছে । চাকুরি আমাদের অধিকার, আমরা সেই অধিকার ফেরত চাই। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে দাবি করে তিনি বলেন,একদিকে আমাদেরকে চাকুরিচ্যুত করতে চাচ্ছে অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিং সিস্টেমে নতুন লোক নিয়োগ দিতে চাচ্ছে। বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশে আমরা আর বৈষম্যমূলক নীতি চাই না। তথ্য আপাদের চাকুরি রাজস্বকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।