কুমিল্লার দেবিদ্বারে গোমতী নদীর বুক চিরে খেতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে একটি অসাধু মাটি কাটা চক্র। উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের গোমতী নদীর বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে দেখা গেছে খলিলপুর ব্রীজের পশ্চিম পাশ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে লক্ষীপুর ব্রীজ পর্যন্ত ৫টি স্পট থেকে প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর দ্বারা প্রতিনিয়তই চলছে মাটি পরিবহনের প্রতিযোগিতা। পুরো এলাকা জুড়ে ট্রাক্টরের শব্দে আতঙ্কে বিরাজ করছে জনমনে। মাটি পরিবহনের কারনে গোমতী বেড়িবাঁধের আশপাশের বসত বাড়িগুলো হয়ে উঠেছে ধূলায় অন্ধকার। ফলে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে নদীর আশপাশে বসবাসকারী মানুষগুলোর। নার্গিস নামে এক বোন জানান, খাবারের মধ্যে বালুর সংমিশ্রণের কারনে ঠিকমতো খাবারও খেতে পারছি না, অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি-ঘর তালাবন্ধ রেখে চলে যাচ্ছে  দূরদূরান্তে। অনেকেই ছুটে চলেছে আবার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। মাটিকাটার মৌসুম শেষে আবার বাড়ি ফিরবে সেই আশা  তাদের মনে।

 প্রতিদিন শত শত ট্রাক্টর দিয়ে নদীর বুকের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ও বসতবাড়িতে। নদীর ভিতর থেকে ট্রাক্টরগুলো উঠা-নামার জন্য প্রতিটি স্পটের পাশের বেড়িবাঁধ কেটে রাস্তা করা হয়েছে দু'টি করে। বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে ট্রাক্টর দ্বারা মাটি পরিবহনের কারনে বেড়িবাঁধ রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। 
আশপাশের নিরীহ মানুষগুলো তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ করলেও নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়তই। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা এবং দায়িত্ব অবহেলার কারনেই এই মাটি কাটার চরম মহোৎসবে মেতে উঠেছে ওই এলাকার প্রভাবশালী অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারি মো. সুমন মিয়া সহ কয়েকজন লোক মাটি কাটা চক্রের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ টাকা কালেকশন করতে আসেন প্রতিদিন সন্ধ্যায়। এই ঘুষের টাকার কিছু অংশ ঢুকে যায় এসিল্যান্ড অফিসের গাড়ী চালক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ী চালকের পকেটেও। জানা যায়, গোপনীয়ভাবে দৈনন্দিন প্রশাসনের অভিযান সিডিউল তথ্য সংগ্রহ করে এসিল্যান্ড অফিসের গাড়ী চালক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ী চালক প্রশাসন কর্তৃক অধিকাংশ অভিযান পরিচালনার আগেই ওই অসাধু চক্রকে মুঠোফোনে সতর্ক করে দেয়। ফলে আশানুরূপ অভিযান পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন প্রশাসন। 
ভূক্তভোগী এক ব্যক্তি জানান, মাটি কাটার ৫টি স্পটে প্রশাসন অভিযানে যাওয়ার প্রবেশ পথগুলোতে সারাদিনই ছদ্মবেশে পাহাড়ায় বসে থাকেন তাদের নিজস্ব লোক। আর তাদের এই সূক্ষ্ম কৌশলের পরামর্শদাতাও নাকি এসিল্যান্ড অফিস এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর। নদী-তীরবর্তী আবদুল মান্নান বলেন, সব মহলকে ম্যানেজ করেই চলছে এই হরিলুট। প্রতিবছরই আমরা দেখেছি দুই-তিনটি ট্রাক্টর ধরে আর টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়, এই নাটকই তো চলছে। এই নাটক নিজ চোখে দেখে আমরা প্রশাসনের প্রতিও আর ভরসা করতে পারি না। তিনি আরও বলেন, গোমতী নদীর মাটি ও বালু যেভাবে প্রতিদিন কেটে নেওয়া হচ্ছে তাতে আমরা চরম আতঙ্কের  মধ্যে আছি। নদীতে জমাট বাঁধা মাটি যেমন কেটে নেওয়া হয়েছে, তেমনি পুরনো চরের সব মাটিও কেটে নেওয়া হয়েছে। এতে নদীর পানির স্রোতধারা বদলে কোন দিকে যে যাচ্ছে তার কোনো ঠিক নেই। এতে চরম একটি বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে নদী তীরে বসবাসকারী সাধারন মানুষগুলো।