ঢাকার ধামরাইয়ে মুসুল্লীদের বিরুদ্ধে শুকুর আলী নামে এক পীরের মাঝার ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৬৬ তম ওরোশ চলাকালে প্রথমে তা বন্ধ করে দেয় কতিপয় মুসুল্লীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুন নালাই গ্রামে প্রয়াত শুকুর আলী শাহ ফকিরের মাঝারে এ ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭শ থেকে ৮শ ব্যক্তিকে আসামি করে ধামরাই থানায় একটি মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। এদিকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে শুকুর আলী ফকিরের দুই ছেলে তাদের পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়ে আতœগোপনে চলে গেছেন। ভাঙচুরের ঘটনায় ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ধামরাই ইমাম পরিষদের নেতাকর্মীসহ বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসার লোকজন উপস্থিত ছিল বলে জানান স্থানীয়রা ।
    ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে অর্জুন নালাই গ্রামে গত বৃহস্পতিবার শুকুর আলী ফকিরের মাঝারে ৬৬তম বাৎসরিক ওরোশ চলছিল। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউল গান হওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের নেতৃত্বে একদল মুসল্লি অর্জুন নালাই জামে মসজিদে জড়ো হন। প্রথমে তারা ওরোশ ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি জানান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায়, রাত ৮টার দিকে পুলিশ ওরোশ সংশ্লিষ্টদের আয়োজন বন্ধের কথা জানায়। এ সময় মুসল্লিরা ওরোশের আয়োজকদের গ্রেপ্তার ও মুচলেকা নেওয়ার দাবি জানান। পুলিশ তাতে সায় দেয়নি। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর রাত ১০টার দিকে সেখানে উপস্থিত অন্য ৫০ থেকে ৬০ জন মুসল্লিরা দলবেঁধে সেখানে ঢুকে মাঝারটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। সেখানে থাকা দুটি কবরসহ বসতবাড়ির একটি টিনের ঘর সম্পূর্ণ ভাংচুর করে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছরিয়ে পড়ে। মাজার সংশ্লিষ্ট পরিবার প্রাণ ভয়ে বাড়ি ত্যাগ করে চলে যায় ।
        নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে বহিরাগত শতাধিক মুসল্লি মসজিদে জরো হন। স্থানীয় বেশ কিছু লোকও ছিলো সেখানে। মসজিদের মাইকে ওই মাঝারে সেজদা দেওয়া, মান্নত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না বলে শ্লোগান দেয়। রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ জন মুসল্লি লাঠিসোডা হাতে মাঝার ভেঙে গুড়িয়ে ফেলেন।
      প্রয়াত শুকুর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, মাঝারে মোমবাতি আর আগরবাতি জালাইতাম। বহু বছর ধইরা ওরোশ হয়। মুসল্লিদের কথায় ওরোশ আমরা বন্ধ করছিলাম। এরপর রাইতে ফের আইসা মাঝার ঘর দোর সব ভাইঙ্গা দিছে। ওরা আমারে মারতে চাইলে মারুক। ভয়ে পোলারা বউ পোলাপান নিয়া চইলা গেছে। পুলিশ আইছিল কইছে মামলা করতে আমরা মামলা করলে মামলা চালামু কেমনে।
    ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহ বলেন, ওই বাড়িতে মাদক কারবারিসহ অনৈতিক কর্মকান্ড হয় বলে অভিযোগ আছে। সত্যতা নিশ্চিত হতে উপজেলা ইমাম পরিষদের কয়েকজন নেতা ওই বাড়ির পাশেই মসজিদে জড়ো হয়। ভাংচুর নয়, মূল লখ্য ছিল মাদক ও অনৈতিক কাজ বন্ধ করা। পুলিশের কাছে তারা ওরোস বন্ধ করার স্বীকার করে। তখন এশার নামাজ শেষে সবাই চলে যায়। এরপর স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাঝার ভেঙ্গেছে বলে শুনেছি।
    মামলার বিষয় নিশ্চিত করে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, মাঝার ভাংচুরের ঘটনায় আক্কাস আলী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।