র্যাব সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার খালিশখালি এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়দেব আধ্য (৫৩) ও তার ভাই বিশ্বনাথ আধ্য (৫৭) গতকাল রাজধানীর তাঁতিবাজার এলাকা থেকে জুয়েলারি তৈরির যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’ বাসে সাতক্ষীরার উদ্দেশে রওনা হন। বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে বাসটি ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান থেকে ছাড়ে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার জয়বাংলা মোড় এলাকায় পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস এসে বাসটির পথরোধ করে। র্যাব লেখা কালো জ্যাকেট ও ক্যাপ পরিহিত ৩–৪ জন ব্যক্তি বাসে উঠে নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে জয়দেব ও বিশ্বনাথকে জোরপূর্বক বাস থেকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তাদের চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে নগদ ২,৭০০ টাকা ও যন্ত্রাংশ ছিনিয়ে নেয়।
ঘটনার খবর পেয়ে র্যাব-১০ দ্রুত অভিযানে নামে। গোপন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে জয়বাংলা মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাসসহ ৫ জন ডাকাতকে গ্রেফতার এবং ভুক্তভোগী দুই ভাইকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো: ফরিদপুরের দিদার (২৯), গাইবান্ধার মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), চাঁদপুরের মিন্টু গাজী (৪৫), মাদারীপুরের মো. জামিল (৩২) এবং শরীয়তপুরের স্বপন খান (৪৫)।
অভিযানের সময় স্থানীয় জনতা মাইক্রোবাসটি ঘেরাও করে ভাঙচুর করে। এ সময় মো. সাইফুল ইসলাম ও স্বপন খান পালানোর চেষ্টা করলে জনতা তাদের ধরে ফেলে মারধর করে। পরে র্যাব সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ৪টি কালো র্যাব জ্যাকেট, ৩টি ক্যাপ, ২ জোড়া হাতকড়া, ১টি রেইনকোট, ২টি ওয়াকি টকি সেট ও চার্জার, ১টি গ্যাস লাইট, লেজার লাইট, স্টানগান, মোবাইল ফোন ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই পূর্বে ডাকাতি, চুরি, অস্ত্র ও হত্যার মতো অপরাধে জড়িত ছিল। মিন্টু গাজীর বিরুদ্ধে ৩টি, সাইফুলের বিরুদ্ধে ৩টি, দিদারের বিরুদ্ধে ৮টি, স্বপনের বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা মামলা রয়েছে এবং জামিলের বিরুদ্ধে রয়েছে ১টি হত্যা মামলা। সাইফুল ও জামিল পূর্বে একই মামলায় কারাগারে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। র্যাব সাধারণ জনগণকে সতর্ক করে বলেছে, কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিলেই তা যাচাই করা উচিত। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে ৯৯৯ নম্বরে কল করে বা নিকটস্থ থানায় জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তঃজেলা পরিবহনে যাত্রার আগে সিসিটিভি স্থাপন ও যাত্রীদের স্থিরচিত্র ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।