বারবার একই দোয়া করেও দোয়া কবুল হয় না— এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। বারবার দোয়া করেও কবুল না হওয়ায় অনেক সময় ক্লান্তিবোধ হয়। আবার কেউ কেউ উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
অনেকেই ভাবেন, আমার ঈমান দুর্বল ও আমল ঠিক না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। বিষয়টি এমন নয়, বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। ধৈর্য, নিষ্ঠা ও রবের উপর নির্ভরতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের এভাবে পরীক্ষা করেন।
দোয়া করার পর কবুল না হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক ও একজন মুমিনের মনের পরীক্ষার জন্য এমনটি হয়ে থাকে। নবী ও সৎকর্মশীল বান্দারাও কখনো কখনো দোয়া কবুল হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছেন। তাই নামাজ ও ইবাদতে মগ্ন থাকার পরও দোয়া কবুল না হওয়া ঈমানের দুর্বলতার পরিচয় নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায়।
কোরআনে এ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
বান্দাকে দোয়ার প্রতি আগ্রহী করতে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সুরা গাফির, আয়াত : ৬০)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ডাকে বা দোয়ায় সাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তার সব উত্তর তাৎক্ষণিকভাবে এবং আমাদের প্রত্যাশিত রূপে আসে না।
কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। (সুরা বাকারা, আয়াত :১৫৫)
আল্লাহ তায়ালা বিপদাপদ দিয়ে তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। তবে সব পরীক্ষাই শাস্তি নয়, বরং কিছু পরীক্ষা আত্মিক পবিত্রতা অর্জন বা কোনো গোপন বিপদ থেকে হেফাজতের মাধ্যম হতে পারে।
হাদিসে যা বলা হয়েছে
দোয়া কবুলের বিষয়ে এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করেন। অথবা তদানুযায়ী তার থেকে কোনো অমঙ্গল প্রতিহত করেন। যতক্ষণ না সে কোনো পাপাচারে লিপ্ত হয় বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দোয়া করে।’ (তিরমিজি)
কোনো মুসলমান দোয়া করলে, যদি তাতে গুনাহ বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার কিছু না থাকে, তবে আল্লাহ তায়ালা তার দোয়াটি তিনটি উপায়ে কবুল করেন : তাৎক্ষণিকভাবে কবুল করেন, পরে আখেরাতে দেন, বা তার পরিবর্তে কোনো অনিষ্ট দূর করে দেন। (মুসনাদ আহমাদ ১১১৩৩)
অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা সবসময়ই শোনা হয়। কিন্তু কখনো কখনো ফলফল পেতে দেরি হয়।
দোয়া কবুলে বিলম্বের পেছনের রহস্য
১. আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে আত্মিকভাবে উন্নীত করার চেষ্টা করেন।
দোয়া শুধু পাওয়ার বিষয় নয়। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার একটি মাধ্যম। বিলম্বে দোয়া কবুলের বিষয়টি একজন বান্দার ঈমানের মান যাচাই করে।
২. বান্দার জন্য আরও ভালো কিছু প্রস্তুত করা হচ্ছে
বান্দার আল্লাহর কাছে যা চাইছেন, তা হয়তো এখন বা কখনোই তার জন্য উপযুক্ত নয়। আল্লাহ তার দয়ায় বান্দাকে আরও ভালো কিছুর দিকে পরিচালিত করছেন, যা সে উপলব্ধি করতে পারছে না।
৩. গুনাহ মাফ করা হচ্ছে
দোয়া করার পর তাৎক্ষণিকভাবে কবুল না হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে, ভবিষ্যতের কোনো বিপদ দূর করে দেওয়া, অথবা অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া।
৪. কঠিন সময়ে আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা করেন
আমরা একান্ত প্রয়োজনের সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করি। অন্য সময় দোয়া থেকে বিরত থাকি। দোয়ার করার সময় সঙ্গে সঙ্গে কবুল হলে তাৎক্ষণিক শুকরিয়া আদায় করা সহজ। কিন্তু দোয়া কবুল না হলে এবং মন খারাপ থাকলে আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাওয়াই একজন প্রকৃত বান্দার পরিচয়।
দোয়া করতে ক্লান্তি বোধ হলে করণীয়
কখনো বারবার চাওয়ার পরও না পেলে হতাশার বিপরীতে নিয়মিত দোয়া করে যাওয়া উচিত। মন না চাইলেও দোয়া করা ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা বান্দার পরিশ্রম দেখছেন এবং তিনি সবকিছুই জানেন। তাই দোয়া করে যেতে হবে।
তাৎক্ষণিক ফলাফলের বদলে ধৈর্য ও শান্তির দোয়া করুন। আল্লাহর কাছে বলুন : হে আল্লাহ, তোমার ফয়সালায় আমাকে সন্তুষ্ট থাকার শক্তি দাও।
বারবার ইসতিগফার পাঠ করুন
গুনাহ দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। তাই বেশি বেশি ইসতিগফার পাঠ করুন। নবী (সা.) নিষ্পাপ থাকার পরও প্রতিদিন ৭০ বার ইসতিগফার করতেন।
অন্যের জীবন দেখে হীনমন্যতায় ভুগবেন না
অন্যের জীবন দেখে হীনমন্যতায় ভুগবেন না। কারণ, প্রত্যেকেরই অদৃশ্য কষ্ট থাকে। দোয়া কোনো প্রতিযোগিতা নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক তৈরির উপায়।
জিকির করুন ও নেক লোকদের সাহচর্যে থাকুন। কারণ, ভাল পরিবেশে থাকার কারণে হৃদয় কোমল হয় ও আত্মিক শক্তি অর্জন হয়।
মনে রাখতে হবে, বান্দার কষ্ট, যন্ত্রণা কোনো কিছুই নিরর্থক নয়। আল্লাহ বান্দার চোখের পানি সম্পর্কে জানেন, তার দোয়া শোনেন ও তার চেষ্টা দেখেন। একান্ত অসহায়ত্বের মুহূর্তটিতে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাওয়াই সমীচীন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর যে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে, তা নিশ্চয় দৃঢ়সংকল্পেরই কাজ। (সুরা শুরা, আয়াত :৪৩)