পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপকূল এখন পরিণত হয়েছে মাদকের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত সমুদ্রপথে আসা মাদক স্থানীয় মাদকসেবী ও পর্যটকদের কাছে বিক্রির পর সড়ক ও নৌপথে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন ও চোলাই মদের পাশাপাশি এবার মিলেছে ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ-এর উপস্থিতি।স্থানীয় সূত্র ও বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ মাদক সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাসোহারা নেয় সোর্স পরিচয়ে। ফলে অভিযানের আগেই তথ্য পৌঁছে যায় ব্যবসায়ীদের কাছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে খুচরা বিক্রেতা বা বহনকারীদের আটক করা হলেও দুর্বল তদন্ত ও সাক্ষ্যের অভাবে তারা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মূল হোতারা, যাদের অনেকে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়, রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।বড় বড় অভিযান, কিন্তু নেই গডফাদারদের নাম
২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর টেকনাফের ইব্রাহীম ও উখিয়ার রোহিঙ্গা আলমকে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয় কুয়াকাটা উপকূলে। অস্ত্র, গাড়ি, মোবাইলসহ বিপুল আলামতসহ আটক হলেও তদন্তে গডফাদারদের নাম উহ্য থেকে যায়। একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হলেও রহস্যজনকভাবে ফলাফল শূন্য।২০১৭ সালের ১ জুন ফাতেমা আক্তার সানজিদা নামের এক নারীকে ৩৯৫০ পিস ইয়াবাসহ আলীপুর মৎস্যবন্দর থেকে আটক করা হয়। তার সাথে এক মাছধরা ট্রলারের মাঝি ও প্রভাবশালী আড়ৎদারের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও পুলিশি রিপোর্টে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
২০১৫ সালের ২ জুলাই পুলিশের অভিযানে মাদকসহ ভারতীয় শাড়ির বড় চালান জব্দ করা হয় খাপড়াভাঙ্গা নদী থেকে। পরে জব্দ তালিকায় শুধু শাড়ি দেখিয়ে মাদক গায়েব করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেল থেকে ১২০০ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার হয়। গ্রেফতার হয় দুই কর্মচারী, মালিক থাকে অন্ধকারে।
একই বছরের ২ মে নিশানবাড়িয়া খাল থেকে ৬৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৬ জন গ্রেফতার হয়। আবার ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর নেওয়াপাড়া থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার হয় বনি আমিনের বাড়ি থেকে। পালিয়ে গেলেও ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি ফের গ্রেফতার হন ৬৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ।
সাম্প্রতিক উদ্বেগ: ভয়ঙ্কর ‘ক্রিস্টাল মেথ’
চলতি বছরের ৩ জুলাই কলাপাড়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে ইয়াবা ও ৮ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথসহ আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ৪ জুলাই কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিমুর রশিদ এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিচ্ছিন্ন আটক, ফের জড়িয়ে পড়ছে অপরাধীরা
মহিপুর ও কলাপাড়ার দুটি থানার অধীনে দুই পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে নিয়মিত চোলাই মদ, ইয়াবা ও গাঁজাসহ শত শত বিক্রেতা ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করা হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তারা জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয়ঙ্কর মাদকের ভয়াল আগ্রাসন ঠেকাতে কেবল অভিযান যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন নিয়মিত কাউন্সেলিং, সংশোধনাগারভিত্তিক চিকিৎসা ও মনো-সামাজিক পুনর্বাসন। সেই সাথে গোপন তথ্য সংগ্রহ করে গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।
স্থানীয় বাজারে দাম ও শিশুদের ব্যবহার
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কলাপাড়ায় এক পোটলা গাঁজা ১০০-২০০ টাকা ও প্রতিপিস ইয়াবা ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইয়াবা বহনে কোমলমতি শিশু ও নারীদের ব্যবহার করছে সিন্ডিকেট।
পুলিশের অবস্থান
মহিপুর থানার ওসি মো. মাহমুদ হাসান বলেন, “মাদকের বিস্তার ঠেকাতে থানার সব অফিসারকে নিয়ে সভা করেছি। সোর্সদের ক্ষেত্রেও নতুন কৌশল নিচ্ছি। যেখানেই মাদক, সেখানেই পুলিশ পৌঁছাবে।”
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জুয়েল ইসলাম বলেন, “আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। প্রায় প্রতিদিনই মাদক ব্যবসায়ী ও ছিচকে চোরদের গ্রেফতার করছি। সোর্সদের বিষয়েও আমরা