"এ্যাক (এক) কলস পানি আইন্না (এনে) দেই আর আমারে পাঁচ টাহা (টাকা) দেয়, আমখলা অইতে (থেকে) গলাচিপা আইতে (আসতে) যে দোহান (দোকান)গুলো বাজে হেইয়ার (সেগুলোর) য্যাগো য্যাগো (যাদের) পানি লাগে, হ্যাগো (তাদেরকে) এক কলস পানি আইন্না দ্যালে (দিলে) ৫ টাহা দেয়। অ্যাতে (তাতে) আমার প্রত্যেকদিন একশো-দেড়শো টাহা পাই, হ্যা (তা) দিয়া আমি খাই। টাহা পাইলে খাই , না পাইলে খাইনা। কোনো গুড়াগাড়া (ছেলে-মেয়ে) না থাহনে ৫ বছর আগে বউডাও (বউ) চইল্লা (চলে) গ্যাছে (গেছে)। এহন (এখন) একলা একলাই থাহি (থাকি)।" ঠোঁটের কোনায় মুচকি হেসে কথাগুলো বলছিলেন, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাফর (৫০)।
মানুষ যেখানে হাজারো টাকা উপার্জনের জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে সেখানে জাফরের মত মানুষ সামান্য রুটি-কলা কিনে খাবার জন্য রোগাক্রান্ত ভঙ্গুর শরীর নিয়ে কাঁধে বহন করছে কলসি ভরা পানি, ছুটে চলে গ্রাম থেকে শহরে। যার কোনো ভাবনা নেই বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে।
তার সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, সে শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে কোনো ভারি কাজ সে করতে পারেনা। এজন্য সে পার্শ্ববর্তী কোনো নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে দোকানে দোকানে সরবরাহ করে থাকে। সে প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ কিমি পায়ে হেঁটে গলাচিপা শহরে আসে এবং দোকানে দোকানে প্রতি কলস পাঁচ টাকার বিনিময়ে পানি সরবরাহ করে। এতে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে খাবার কিনে খেতে হয়। যেদিন আয় করতে পারেনা সেদিন তাকে না খেয়েই দিনাতিপাত করতে হয়। কোনো সরকারি অনুদান কিংবা সহযোগিতা পায়না। তবুও যেন কারো প্রতি তার কোনো অভিযোগ কিংবা আক্ষেপ নেই।
এলাকাবাসী জানান, সে দোকানে দোকানে পানি টেনে দিয়ে নিজের জীবন-যাপন করে। মাঝে মাঝে অসুস্থ হলে চিকিৎসা, ঔষধ ছাড়া না খেয়ে নিজের জরাজীর্ণ বাসায় পড়ে থাকে। বর্তমানে বাজার ১০০/১৫০ টাকা আয় দিয়ে সে কোনো মতে জীবন পাড় করে। শীত-বর্ষা-গ্রীস্ম সব সময়ই অতি কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়। সহজ-সরল, কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সে অনেক কিছুই বুঝেনা। তাছাড়া তার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে সরকারি-বেসরকারি কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা সে পায়না। অনেক সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহায়তা প্রদান করার জন্য তাকে ডাকা হলেও সে যে তা সংগ্রহ করবে সেই বুঝ তার মাথায় আসেনা।
এলাকাবাসীদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার এনআইডি কার্ডের ব্যবস্থা করে তাকে সরকারি সহযোগিতা প্রদান করলে সে উপকৃত হবে।