পাবনার সুজানগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দুলাই উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধ গাইডবই চালানোর প্রস্তাব দিয়ে দুটি প্রকাশনী থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে

পাবনার সুজানগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দুলাই উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধ গাইডবই চালানোর প্রস্তাব দিয়ে দুটি প্রকাশনী থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের সাবেক অভিভাবক সদস্য খোন্দকার গোলাপ আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত দুলাই উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১,৭২০ জন। চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্য সহায়ক হিসেবে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ‘লেকচার’ ও ‘পাঞ্জেরি’ গাইড বই চালু করার উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক গ্রুপ পৃথকভাবে ওই দুটি প্রকাশনী থেকে অর্থ গ্রহণ করেন। অভিযোগে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন লিটনের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ লেকচার প্রকাশনী থেকে গাইডবই চালানোর শর্তে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। অপরদিকে সহকারী শিক্ষক এনামুল হক পাঞ্জেরি প্রকাশনী থেকে ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এই টাকার একটি অংশ শিক্ষক মোল্লা মো: শামসুদ্দৌলার মাধ্যমে ব্যাংকে জমা রাখা হয় এবং পরে কয়েকজন শিক্ষক নিজেদের মধ্যে তা ভাগ করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে । প্রধান শিক্ষক লেকচার গাইডের ভিত্তিতে একটি সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করতে চাইলে, অপর গ্রুপের শিক্ষকরা বাধা দেন। তারা দাবি জানান, লেকচার প্রকাশনী থেকে নেওয়া অর্থ যেন সকল শিক্ষকের মধ্যে সঠিকভাবে বণ্টন করা হয়, অন্যথায় পাঞ্জেরির গাইডের ভিত্তিতে সিলেবাস তৈরি করা হবে। সহকারী শিক্ষক মোল্লা মো: শামসুদ্দৌলা জানান, প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন। অপরদিকে এনামুল হক অর্থ গ্রহণের বিষয়ে মন্তব্য না করে জানান, বিদ্যালয়ে পাঞ্জেরি গাইড চালু করা হবে। পাঞ্জেরি ও লেকচার প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে একাধিক অভিভাবক জানান, যেসব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে পরিচালিত করবেন, তারাই এখন অবৈধ গাইড বই বিক্রিতে জড়িত হয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল পথে পরিচালিত করছেন। একই বিদ্যালয়ে দুই ধরনের গাইড চালু হলে শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন লিটন দাবি করেন, কোনো গাইড বই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। যেসব শিক্ষক কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর সঙ্গে জড়িত, তারা হয়তো এ কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি সুজানগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ  জানান, বিষয়টি তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকারি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।