বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ একটি সমস্যা হচ্ছে প্রকাশ্যে ধূমপান। একজন ধূমপায়ী রাস্তা, হাসপাতাল কিংবা স্টেশনে বসেও প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন, যা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।ধূমপায়ী ব্যক্তি যেমন নিজের ক্ষতি করছেন, তেমনি প্রকাশ্যে ধূমপানের মাধ্যমে আশেপাশের মানুষের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছেন। ধূমপানের ধোঁয়ায় থাকে হাজারো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যার মধ্যে ৭০টি সরাসরি ক্যানসার সৃষ্টি করে। ধূমপানের ফলে মুখ, অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস, গলা, কিডনি এমনকি জরায়ুরও ক্যানসার হতে পারে। পাশাপাশি, ধূমপানের অন্যতম বড় ক্ষতি হচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। প্রকাশ্যে ধূমপান শুধু ধূমপায়ীর নিজের নয়, আশেপাশের মানুষের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ। ধূমপানের ধোঁয়া বাতাসে মিশে গিয়ে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে। এর ফলে শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে ছয় লক্ষ শিশুর মধ্যে ৩১% শিশুর অকাল মৃত্যু হয়েছিল শুধুমাত্র ধূমপায়ীদের ধোঁয়ার বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে। জার্মানির ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ধূমপানের কারণে প্রতি বছর ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া, প্রকাশ্যে ধূমপানের কারণে আরও প্রায় ৩৩০০ মানুষ প্রাণ হারান। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাশ করে। এই আইনে পাবলিক প্লেস (যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, সিনেমা হল, হাসপাতাল, মেলা, যাত্রী ছাউনি, পাবলিক টয়লেট, আদালত ভবন ইত্যাদি) এ ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়। কেউ আইন অমান্য করলে প্রথমে ৫০ টাকা এবং পরবর্তীতে সংশোধন করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই আইন পাশের ২০ বছর পরও কি আমরা এর সফলতা দেখতে পাচ্ছি? একটি শিশুর সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। তাই আসুন, যারা প্রকাশ্যে ধূমপান করেন, তাদের সচেতন করি ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে তারা প্রকাশ্যে ধূমপানকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে।