বাংলাদেশের ৫৪ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের উদ্দেশ্যে একটি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু। বার্তায় ভারতের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, জাতীয় দিবস উপলক্ষে ভারত সরকার, জনগণ ও আমার পক্ষ থেকে আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণকে উষ্ণ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।তিনি আরও বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বহুমুখী। আমাদের সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, বহুমুখী সংযোগ, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং মানুষের সঙ্গে মানুষে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র।
ভারতের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতি ও এসএজিএআর (অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধি) মতবাদ এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক বার্তায় মোদী বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় দিবস উপলক্ষে আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই দিনটি আমাদের ভাগ করা ইতিহাস এবং ত্যাগের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যা আমাদের দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সম্পর্কের জন্য একটি পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে চলেছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বিকশিত হয়েছে। আমাদের জনগণের জন্যও এটি বাস্তব সুবিধা বয়ে এনেছে। শান্তি, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধির জন্য এবং একে অপরের স্বার্থ ও উদ্বেগের প্রতি পারস্পরিক সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে এই অংশীদারিত্বকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের আসরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের যে প্রস্তাব ঢাকা দিয়েছিল, তাতে নয়াদিল্লীর সাড়া মেলেনি। এই সফরে কেবল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদি। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে মোদীর সফরসূচি নিয়ে শুক্রবার (২৮ মার্চ) যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তাতে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের কোনো কথা রাখা হয়নি।
পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমরা যে কোনো দেশের সাথে শীর্ষ পর্যায়ের যে বৈঠক, সেই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এবং আমরা আশা করি যে, যদি এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে স্থবিরতা, সেটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস চীন সফরের আগে ভারত ভ্রমণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকার অনুরোধে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। ভারতের সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দুকে এ কথা জানিয়েছিলেন ড. ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে উষ্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চান বলেও জানান শফিকুল আলম। তিনি ব্যাখ্যা করেন, আমরা আসলে আমাদের আগ্রহ দেখিয়েছিলাম এবং গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ভারত সফরের জন্য ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। তার চীন সফর চূড়ান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে এটি করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা ইতিবাচক সাড়া পাইনি।
২৬-২৯ মার্চ চীন সফরের সময় ড. ইউনূস বিশিষ্ট চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও অধ্যাপক ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে আতিথ্য দেওয়া হবে। সেখানে তিনি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করবেন। ২৭ মার্চ বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলনেও যোগ দেবেন তিনি।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অত্যন্ত সফল, ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার পোস্টে লিখেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে একটি অত্যন্ত সফল দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা হয়েছে। ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। এর ফল দ্রুতই দুই দেশের জনগন ভোগ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
অপরদিকে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে একটানা ১৬ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে থাকার সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ‘সুসম্পর্ক’ তৈরি করেছিল হাসিনা সরকার। হাসিনা-মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ উঠেছিলো। কিন্তু পরিবর্তিত সময়ে চিত্র পাল্টে গেছে পুরোপুরি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। সে সময় ভারত সরকার সে দেশের রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে তাকে আশ্রয় দেয়। ভারতে হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে বিভিন্ন টানাপোড়েন শুরু হয়। কারণ পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশে গণহত্যায় সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন।বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারত সরকারের কাছে চিঠি পাঠালেও এখনো তার জবাব পায়নি বাংলাদেশ সরকার। এমনকি শেখ হাসিনা ভারতে বসে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে না পারেন সে ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হলেও মোদি সরকার তা নিশ্চিত করতে পারেনি। শেখ হাসিনা ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে সামাজিক মাধ্যমে উসকানিমূলক অডিও বার্তা ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে যাচ্ছেন।
ভারত এখনও বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা অনুধাবন করতে পারছে না। এটা তাদের পররাষ্ট্র নীতির একটি দুর্বলতা। এছাড়া ভারত আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতো, ভারতের সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তারা তাদের ভ্রান্ত মানসিকতার থেকে বেরিয়ে না আসার ফলাফল যদি বুঝতে না পারে সে ক্ষেত্রে দু'দেশের সম্পর্ক সহসাই উষ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল একটি অংশ 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়' এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ঠিকই ডঃ ইউনূস এর যোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর ভূমিকা কি হবে সেটা তারাই ঠিক করবে। তারা কি আমাদের সাথে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক স্থাপন করবে না কি একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবারের কারনে রাষ্ট্রকে অবজ্ঞা করবে সেটা তাদেরকে ই নির্ধারণ করতে হবে।