গত সাত ই আগস্ট রাত ৮ টায় গাজীপুর ভাসান এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ তুলে বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজ এ মামলা দায়ের করেন। মামলার আবেদনে মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী তানভীর সিরাজ মামলার পর গণমাধ্যমকে বলেন, “অপরাধী চক্রের ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এনসিপি নেতা সারজিস আলম না জেনেই ফেসবুকে এ ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে নানা অপপ্রচার চালিয়েছেন, যা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এরইমধ্যে জিএমপি কমিশনার এ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করেছেন। সেখানে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে তিনি বলেন। তাই দলের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি বাদী হয়ে মামলাটি রুজু করেছি।”
এডভোকেট ফজলুর রহমানের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও সারজিস আলমের নামে গাজীপুরে মামলা করার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জের বিপ্লবী ছাত্র জনতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতৃবৃন্দ বুধবার (১৩ আগষ্ট) কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কিশোরগঞ্জের বিপ্লবী ছাত্র জনতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতৃবৃন্দ বলেন বিপ্লবী ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে আজ আমরা এখানে দাড়িয়েছি। আজকে এমন দিনে আপনাদের, সামনে আমরা হাজির হয়েছি যখন বিপ্লবের এক বছরের মাথায় ই বিপ্লবীদের কে মৃত্যুর ভয় দেখানো হচ্ছে। যেই মুজিববাদকে আমরা উপড়ে ফেলেছি সেই মুজিববাদের সৈনিক যে কিনা আবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিচয়ে পরিচিত এড. ফজলুর রহমান যার প্রতিটা কথায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কন্ঠ শোনা যায়। যে কিনা আমাদের ছাত্র জনতার বিপ্লবকে স্বীকার তো করেই না বরং এই বিপ্লবকে অস্বীকার, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, শহীদদের অবমাননা, আহতদের তিরস্কার সহ অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে আওয়ামী বয়ানে ঘায়েল করতে চান। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই,এই বাংলাদেশের জমিনে আর কোনো ফ্যাসিবাদ,কোনো মুজিবাবাদী শাবককে আমরা মেনে নিবো না। আমরা এখান থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি যে অতি সত্বর এই মুখোশ ধারী মুজিবাবাদী শাবককে তার উপদেষ্টা পদ থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি কে দায়মুক্ত করুন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড. ফজলুর রহমান সম্প্রতি একটা অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলামসহ এনসিপি'র অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিজের ফ্রেমিংয়ে ফেলে 'বেজন্মা' গালি দিয়েছেন। এই আওয়ামী লীগার ও মুজিববাদী এখন বিএনপি'র ন্যারেটর এন্ড ওরেটর। ফজলুর মতো বিএনপি নেতা গত কয়েক মাস ধরে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের হয়ে মাঠে সরব থাকছে। যে ভাষা ও বয়ানে সে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করছে, সে ভাষা ও বয়ান পুরাপুরি খুনি লীগের এবং তার বয়ান খুনি লীগের মিডিয়া সেলগুলোই হরদম প্রচার করে যাচ্ছে।
সিনিয়র রাজনীতিবিদদের আমরা সম্মান করতে চাই। কিন্তু এড. ফজলুর মতো পলিটিক্সে ন্যূনতম আদবের তোয়াক্কা না করা, ইনিয়ে বিনিয়ে ফ্যাসিবাদের দালালি করা, অভ্যুত্থানকে মেনে নিতে না পারা, আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের দায় তাদেরকেই নিতে হবে।
পাল থেকে ছুটে যাওয়া লাগাম ছাড়া কয়েকজনের জন্য বিএনপি বারবার নিজেদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখতে চায় কিনা সেই সিদ্ধান্ত বিএনপির নিতে হবে।
আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি এড. ফজলুর রহমান তার কুরুচিপূর্ণ এবং আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার না করে তাহলে কিশোরগঞ্জের ছাত্র জনতা অবাঞ্চিত ঘোষণা করবে।
সারজিস আলম এর বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কোন ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে বিপ্লবীদের কে দামিয়ে রাখা যাবে না।
বিপ্লবের এক বছরের মাথায় যদি এভাবে বিপ্লবীদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয় পরবর্তীতে যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায় সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে পুলিশ হত্যা মামলা সহ আরও বিভিন্ন ধরনের আওয়ামী নেরেটিভ মামলায় ফাঁসানো হবে বলে আমরা ধারণা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সাবেক সদস্য সচিব মো. ফয়সাল প্রিন্স, সাবেক যুগ্ন আহবায়ক রাতুল নাহিদ ভূইয়া, সাবেক আহবায়ক ইকরাম হোসেন, সাবেক মুখপাত্র, ওয়ারিয়ার্স অফ জুলাই মানস সরকার উৎস, সাবেক সিনিয়র যুগ্ন সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসিম, সাবেক যুগ্ন সদস্য সচিব শামসুর রহমান, সাবেক যুগ্ন মূখ্য সংগঠক সদর উপজেলা তামিম ইকবাল, সাবেক সদস্য আরিফুল ইসলাম রাফি, মিয়াদ, রওজা, মাইশা, সাকেক সদস্য ইটনা উপজেলার সদস্য সচিব দেলোয়ার নেওয়াজ ভূইয়া, সাবেক সদস্য সচিব কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ নুহা প্রমূখ
উল্লেখ্য যে, গাজীপুর কোর্ট ইন্সপেক্টর আহসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক আলমগীর আল মামুনের বেঞ্চে মামলাটি শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।