ফরিদপুর শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে কুমার নদের ওপর একটি লোহার তৈরি বেইলী ব্রিজ রয়েছে, 'আলীমুজ্জামান বেইলী ব্রীজ' যা এখন শহরবাসীর ভোগান্তির প্রধান উপকরণে পরিনত হয়েছে

ফরিদপুর শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে কুমার নদের ওপর একটি লোহার তৈরি বেইলী ব্রিজ রয়েছে, 'আলীমুজ্জামান বেইলী ব্রীজ' যা এখন শহরবাসীর ভোগান্তির প্রধান উপকরণে পরিনত হয়েছে। ব্রিজটি দিয়ে চলে না কোনো যানবাহন। এই সুযোগে দিনে হকার, ভিক্ষুক আর রাতে ছিনতাইকারী, বারবনিতার ভিড় লেগে থাকে। সরু এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করাটাও অনেক সময় কষ্টকর হয়ে যায়।

১৯৩৫ সালে জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ব্রিজটি নির্মাণ করেন তৎকালীন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান চৌধুরী। কুমার নদের শহরের অংশে নির্মিত সর্বপ্রথম ব্রিজ এটি। ব্রিজের এক প্রান্তে ব্যাস্ততম হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজার এবং অন্য প্রান্তে নিউমার্কেট। হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন এর ওপর দিয়ে চলাচল করতো। ১৯৮৮ সালের বন্যায় নদীর তীব্র স্রোতে ব্রিজটি ধ্বসে যায়। এরপর সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে বেইলি ব্রিজ তৈরি করা হয়। তখন থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১১ সালের অক্টোবরে রাতের আঁধারে একটি ট্রাক এই বেইলি ব্রিজের ওপরে উঠে গেলে ব্রিজটি পুনরায় ধ্বসে যায়।
বর্তমানে এই বেইলি ব্রিজে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। ব্রিজটি এই সুযোগে যেনো ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, দুই পাড়ের বাজারে যাবতীয় বর্জ্য-আবর্জনা ফেলার স্থানে পরিণত করা হয়েছে এই ব্রীজের নিচে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে দখল করে নেয়া হচ্ছে নদীর পাড়। শহরের বুকে বেইলি ব্রিজটিকে যুগের পর যুগ অকার্যকর করে রাখায় এই সুযোগ নিচ্ছে সুযোগসন্ধানীরা। অবৈধভাবে ব্রীজ দখল, অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ এর কারণে এটি এখন স্থানীয়দের জন্য বড় সমস্যা।
এই ব্রীজের ওপরে দিনে প্রচুর হকার ও ভিক্ষুক বসে। তাদের যন্ত্রণায় ব্রীজের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর এমনকি সাপ্তাহিক দুই হাটের দিনে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারন হাটের দিনে হকারদের পাশাপাশি গ্রামের গৃহস্থরা তাদের কৃষি বা গৃহস্থালি পণ্য এখানে বিক্রি করতে সমবেত হন। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের তরফে থেকে ব্রীজটি হকার মুক্ত করার প্রয়াস চালানো হলেও সেটা খুব ফলপ্রসু হয়না। যতক্ষণ প্রশাসনের উপস্থিতি থাকে ওটুকুই, তার পরেই আবার পূর্বের মত হয়ে যায়। 
জানা যায় যে একটি চক্র সকল হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে তাদের দিয়ে ব্রীজের ওপর ব্যবসা পরিচালনা করে। অপরদিকে হাট ইজারাদার হাটুরেদের কাছ থেকে হাট খাজনা আদায় করে। এই কারণে হকার ও হাটুরেদের ব্রীজের ওপর থেকে সরানো যায় না। 
এই ব্রীজের অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে পকেটমার, ছিনতাইকারী ও ভ্রাম্যমাণ পতিতা। এদের কারণে এই এলাকাটি চিহ্নিত অপরাধ জোন হিসেবে।
এ সমস্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে জরাজীর্ণ বেইলী ব্রীজ টির জায়গায় একটি আধুনিক প্রশস্ত ব্রীজ তৈরি করা। যাতে ব্রীজের ওপর দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে যানবাহন ও মানুষ চলাচল করতে পারে। তাহলে ব্রীজের ওপরের সমস্যাগুলো সমাধানের সাথে দুই পাড়ের সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। 
ফরিদপুরের জনগন আশা করে যত দ্রুত সম্ভব এই ভগ্নপ্রায় লোহার ব্রীজটির স্থানে একটি আধুনিক ব্রীজ নির্মাণ করে জনগনের ভোগান্তি শেষ করার ব্যবস্থা নেবেন যথাযথ কর্তৃপক্ষ।