আজ ২৯ এপ্রিল ২০২৫ঃ বাংলাদেশের পরিবেশ সচেতন নাগরিক ও সংগঠনসমূহ যখন সারাদেশজুড়ে ফসিল ফুয়েল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) প্রকল্পে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) বিনিয়োগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, খুলনায়ও গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী প্রতিবাদী গোষ্ঠী। ধ্রুব, ক্লিন (কোস্টাল লাইভ্লিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) এবং বিডাব্লিউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি এন্ড ডেভলপমেন্ট) এর যৌথ উদ্যোগে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের ৫৮ তম বার্ষিক সভার প্রাক্কালে খুলনায় আয়োজিত হলো এক ব্যতিক্রমী প্রচারাভিযান।
ধ্রুব সংস্থার নির্বাহী রেখা মারিয়া বৈরাগী বলেন, “এডিবি ২৮৮৪.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মোট ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যার মধ্যে ৮২.৯% অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর প্রকল্পে, ২.৫৫% সৌরবিদ্যুতে এবং বায়ু বিদ্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগ নেই। প্রতি মেগাওয়াটে জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ ২.০৪ মিলিয়ন ডলার, যেখানে সৌরবিদ্যুত প্রকল্পে তা মাত্র ০.৫১ মিলিয়ন ডলার।”
এই প্রচারাভিযানে বক্তারা জানান, এডিবি খুলনার ১৫০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে উন্নীত করতে অতিরিক্ত ১০৪.১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। অথচ, গত ১১ বছরে এই একটি প্রকল্পের পেছনেই সরকারকে ১,৮২৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এডিবি বাংলাদেশে গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে এবং গ্যাস আনার জন্য পাইপলাইনে বিনিয়োগ করেছে অথচ খুলনায় গ্যাসের কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবারও তারা রূপসা ৮০০ মেগা ওয়াট এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে। যার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে কিন্তু এখানেও গ্যাস আসার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও একটি অচল সম্পদ হিসেবে পড়ে থাকবে। এবং গ্যাসের সাপ্লাই না থাকার কারণে সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।
প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণকারী ধ্রুব সংস্থার ত্রিবিনা রায় ,জলবায়ু কর্মী তার বক্তব্যে বলেন, "বিশ্ব যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন এডিবির ফসিল ফুয়েল প্রকল্পে বিনিয়োগ জলবায়ু সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করছে এবং বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।"
তারা আরও জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব অথচ ফসিল ফুয়েলের উপর নির্ভরতা দেশের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। বক্তারা এডিবিকে আহ্বান জানান, অবিলম্বে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে।
আয়োজক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৫৮তম এডিবি বার্ষিক সভার প্রাক্কালে এ ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আরও বড় পরিসরে চলবে, যাতে এডিবি সহ অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের বিনিয়োগ নীতিমালায় জলবায়ু ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব অনুধাবন করে।