২৩ জুলাই (বুধবার ) এনসিপির জুলাই পথযাত্রার গন্তব্য ছিল কুমিল্লা। আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল কুমিল্লা টাউন হল মাঠ। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে আগত নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপস্থিতিতে টাউন হল মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় । প্রখর রুদ্র ও প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে সমাবেশ মাঠে শান্তি ও শৃঙ্খলাপূর্ণ ভাবে অপেক্ষায় থাকেন কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনের । এন সি পি, শাপলা, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, কুমিল্লার নামে বিভাগ চাই, এ জাতীয় স্লোগানে স্লোগানে টাউন হল মাটি প্রকম্পিত করে তুলে তারা।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ছিল চোখে পরার মত। কুমিল্লা শহরকে তারা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেন।
বিকেল ৫টার দিকে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে একটি বিশাল পদযাত্রা শুরু হয়, যা টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত হাজারো শিক্ষার্থী ও দলীয় কর্মী-সমর্থক মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানান।
পদযাত্রা সমাবেশে যোগদান করেন
এনসিপির দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সার্জিস আলম, মুখ্য সংগঠক উত্তরাঞ্চল।
নাহিদা সারোয়ার নিপা সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব,
আবদুল হান্নান মাসউদ সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক,
আলাউদ্দিন মোহাম্মদ ও জয়নাল আবেদীন শিশির, যুগ্ম সদস্য সচিব,এডভোকেট তরিকুল ইসলাম, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক,
নাভিদ নওরোজ, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক,
হাফসা জাহান, কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য,
সালাউদ্দিন জামিল সৌরভ কেন্দ্রীয় নেতা,
সিরাজুল ইসলাম কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা এনসিপির আহ্বায়ক সহ জেলা, উপজেলার নেতাকর্মীবৃন্দ।
দেশ গড়তে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কুমিল্লায় এসে রূপ নিলো শোক র্যালিতে। উত্তরার বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে তারা এই পদযাত্রা কে শোক যাত্রা হিসেবে ঘোষণা করেন। বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছে এন সি পি। রাষ্ট্র সংস্কার কত বেশি প্রয়োজন তা আবারও বলে গেল স্কুলের বাচ্চারা জীবন দিয়ে। এটি কেবল দুর্ঘটনা ছিলো না, এটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও দায়হীন রাষ্ট্র যন্ত্রের ব্যর্থতা।
উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলমের সঞ্চালনায়, সমাবেশটি পরিচালিত হয়।
এতে উপস্থিত স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য প্রদান করেন।
কেন্দ্রীয় নেতা হান্নান মাসুদ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা আন্দোলন করে এক চাঁদাবাজ খেদাই, আরেক চাঁদাবাজ এসে স্থান দখল করে। তিনি আরো বলেন ব্রিটিশ আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার এরশাদ ও ফ্যাসিষ্ট বিরোধী জুলাই আন্দোলন পর্যন্ত আমরা শুধু জালেম আর স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই হচ্ছে, লড়াই করে স্বৈরাচার ঠিকই খেদায় কিন্তু কোথাও নিরাপত্তা পাচ্ছিনা। ঘরে গোম, বাইরে গেলে খুন, রাস্তাঘাট প্রত্যেকটি অফিস আদালতে সীমাহীন দুর্নীতি আর অত্যাচার, এর থেকে একমাত্র পরিত্রাণ সংবিধানিক সংস্কার।
এনসিপির স্লোগান মাস্টার, ক্যাপ্টেন হাসনাত বলেন
সারা বাংলাদেশ ঘুরে এটা আমাদের ৪৪ নম্বর জেলা। যারা দম্ভ করে মাটিতে হাটে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। এটার বাস্তব প্রমাণ পেয়েছি হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে।
হাসিনার ধম্ব করে বলেছিল কুমিল্লা নামের আগে যেহেতু কু আছে,সেহেতু কুমিল্লা নামে কোন বিভাগ হবে না। আমরা হাসিনাকে যখন উৎখাত করতে পেরেছি সুতরাং বিভাগ হলে কুমিল্লা নামেই হবে। খন্দকার মোস্তাকের বাড়ি কুমিল্লায়, এই একটি কারণে কুমিল্লাকে হাসিনা বিভাগ ঘোষণা করেনি, সুতরাং আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে কুমিল্লাকে, কুমিল্লা নামেই বিভাগ ঘোষণা করা হোক।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের একমাত্র স্বীকার হচ্ছে কুমিল্লা। আর কুমিল্লাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেগুলো হয়েছে, সেগুলো হয়েছে একমাত্র নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য ।
আপনারা কুমিল্লার ফ্লাইওভারটির দিকে তাকান, এটি আমাদের কোন কাজে আসেনা, যানজট লেগেই থাকে। আমরা যখন উত্তরাঞ্চল ঘুরে কুমিল্লা প্রবেশ করি, দেখি অধিকাংশ রাস্তাই ঠিক নাই।
উত্তরাঞ্চল মংলা পিরিত অঞ্চল সেখান থেকে কুমিল্লার অবস্থা খারাপ। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, কুমিল্লাকে আমরা দেখব না, তাহলে আমরা নিজেদের অর্থায়নে, টাকা পয়সা তোলে এ রাস্তাগুলো ঠিক করতে হবে।
ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিলেট অভিমুখী যে রাস্তাটা রয়েছে, এখানে দুইটা বাস ক্রস করলে রাস্তা থাকে না, এটা বলে মহাসড়ক, এটা বলে ন্যাশনাল হাইওয়ে?
প্রিয় কুমিল্লা বাসী, কোনভাবে যদি আওয়ামী দোসরা ফিরে আসার সুযোগ পায় তাহলে আপনাদের কোটি সন্তানকে বাঁচতে দিবে না। আপনারা দেখেছেন এই কুমিল্লাতে কিভাবে মন্দিরের হামলা করা হয়েছে, মন্দিরে কোরআন শরীফ রেখে সম্প্রীতির বন্ধন বিনষ্ট করেছে। বাহার সুচির মতন আর কোন আওয়ামী দোসরকে এই কুমিল্লাতে আসতে দেওয়া হবে না।
আপনারা যে, যেই দল করেন না কেন আমাদের কোন সমস্যা নেই, কিন্তু যদি আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে আমরা তা প্রতিহত করব। আমরা কুমিল্লায় আবার আসব। ন্যাশনাল ক্রাইসিসে ঢাকায় থাকার জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এখানে উপস্থিত হতে পারেনি। সুতরাং আমরা সকলে আবার আসার আগেই আপনারা কুমিল্লাবাসি সুসংগঠিত হন।
আমরা কুমিল্লাকে এনসিপির ক্যান্টনমেন্ট বানাবো।
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ফেরাউন পয়দা হয়েছে ঢাকায়, মুসা জন্মগ্রহণ করেছে কুমিল্লায়, আর হাসিনা পলাইছে ইন্ডিয়ায়। এদেশে যতটা আন্দোলন হয়েছে তার প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে কুমিল্লা থেকে। হাসিনার নিদ্রাহীনতার কারণ ছিল এই কুমিল্লা। সত্য বলতে, সাহস দেখাতে কুমিল্লার ছেলেরা কখনো পিছিয়ে থাকেনা। সুতরাং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে থাকুন।
স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা তাদের বক্তব্যে সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি এনসিপির লক্ষ্য ও কুমিল্লার উন্নয়ন নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে, বৈষম্য, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, প্রতিহত করার জন্য এনসিপির পাশে থাকার আহ্বান জানান।