২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার উত্তরায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদ থেকে এসএসজি ৩০০০ স্নাইপার দিয়ে গুলি করা হয়। যা পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে স্পষ্টভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিধ্বংসী বাহিনীর মধ্যে অন্যতম হল দ্য ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো বা এনএসজি (NSG) যারা এই ধরনের স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করে থাকে।
প্রশ্ন হলো ভারতীয় সেনাবাহিনী কিভাবে সীমান্তের এপারে আসলো?
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানায় ঘটে যায় পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক সেনা গণহত্যার ঘটনা। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যা বিডিআর বিদ্রোহ হিসেবে প্রচার করা হলেও এই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলো প্রায় অর্ধশত এনএসজি ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো। যা পুরোপুরি একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব এবং প্রতিরক্ষার উপর সরাসরি আঘাত হিসেবে গণ্য করা হয়।
২০০১ সালের ১৫-১৬ এপ্রিল সিলেট সীমান্তের পদুয়ায়, ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের রৌমারীতে এবং ১৯ এপ্রিল পুনরায় পদুয়া সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৩ টি সশস্ত্র যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই তিনটি যুদ্ধেই বিডিআর সৈনিকরা অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করে বিজয় অর্জন করে। সেই সময়কার বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) আ. ল. ম ফজলুর রহমান বলেন, এতে সর্বমোট ৩ ট্রাক পরিমান যা সংখ্যায় তিন শতাধিক ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো নিহত হয়। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় শুধুমাত্র ১৮ জন ভারতীয় জওয়ান মারা যায়। বাংলাদেশের কাছে ভারতের সেই ঐতিহাসিক পরাজয় তারা কখনো মেনে নিতে পারেনি যার প্রতিশোধ হিসেবেই ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানার নৃশংস হত্যাকান্ড।
মূলত ভারত কখনোই চায়নি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শক্তিশালী হোক ও বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী, মেজর জিয়াউর রহমানরা যখন ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে ৯ মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে লড়াই করে যাচ্ছিলেন ভারত তখন ব্যস্ত ছিলো তাঁদের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং 'র' এর মাধ্যমে মুজিব বাহিনীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিকল্প একটি বাহিনী হিসেবে তৈরী করতে। এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার মাধ্যমে, তিনি নিজেও 'র' ও মুজিব বাহিনীর সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতেন না।
যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও একদিকে আত্মসমর্পন করা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সকল অস্ত্র ভারত নিয়ে যায় যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আরো বেশী শক্তিশালী করতে পারতো, অন্যদিকে মুজিব বাহিনী বা রক্ষী বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে থাকে। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রেস কনফারেন্স করে ভারতীয় বাহিনীর লুটপাট ও অপকর্মের কথা জানানোর কথা ছিলো জহির রায়হানের। কিন্তু সেইদিন তাকে মিরপুর থেকে উঠিয়ে নিয়ে গুম করে হত্যা করে ভারতীয় বাহিনী। ভারত বিরোধী ফেসবুক পোস্ট দেওয়ায় ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহানকে এবং ৬ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ভারতের এই ধরনের কুৎকৌশল স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আজও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে যাচ্ছে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১১টি সাব মেশিনগান, ৩টি রকেট লাঞ্চার, ৩টি গ্রেনেড ফায়ারিং রাইফেল দিয়ে হত্যার পেছনে কথিত এরশাদের নিয়ন্ত্রিত বিপদগামী কিছু সেনা থাকলেও এই কিলিং মিশনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরিকল্পনা ছিলো ভারতের এবং বাস্তবায়নে ছিলো 'র'। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ লক্ষ ‘র' এজেন্ট ও ইনফর্মার সক্রিয় আছে যারা বিভিন্ন সময় দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ এবং ধর্মীয় সংগঠন ইসকন সহ তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সকল অঙ্গ সংগঠন দিয়ে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনী ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ২৫ বছর যুদ্ধ করেছে, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পরদিন থেকে ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ নামে পৃথক হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়েছিলো। এক সময়কার আওয়ামীলীগ নেতা ডঃ কালীদাস বৈদ্য ‘বঙ্গসেনা’ নামে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে তুলেছিলো। খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে এই হিন্দুর্রা গঠনের চক্রান্ত চালানো হয়েছিলো। এটার পেছনেও 'র’ এর হাত ছিল।
১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সৃষ্ট আন্দোলনে ভূমিকা রাখা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পেছনেও 'র’ এর হাত রয়েছে। ভারত তার পছন্দের এবং সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দ্বারা বাংলাদেশে এক মহাবিপর্যয় ঘটাতে চাচ্ছে। ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী ছিলো ভারত যা বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করে 'র'।
২০০৭ সালের কথিত ১/১১ সেনা সরকারের পেছনে পূর্ণ সমর্থন ছিলো ভারতের এবং পরবর্তীতে ২০০৯ - ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনী বিভিন্ন সময় পিলখানা, শাপলা চত্বর, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে নানা সময় অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল থেকে শুরু করে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে হাজার হাজার বাংলাদেশীকে হত্যা করে।
ভারতের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পায়নি জিয়া,সাঈদী,আবরার,ফেলানী,সাগর রুনি,আলেম থেকে সেনাবাহিনী কেউই, সবার উপরে ভারত প্রতিশোধ নিয়েছিল আওয়ামীলীগ ও তাঁদের নিয়োগ করা 'র' এজেন্টদের দিয়ে।
ভারত তাঁদের সেভেন সিস্টার্স রক্ষায়, চীন ও মিয়ানমারের সাথে নিজেদের সীমানা সুরক্ষিত করতে বাংলাদেশকে কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ, সিকিমের মতো অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়। সেই লক্ষে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে জাহাজে অস্ত্র আসছে বলে এবং বাংলাদেশে উগ্রপন্থী মৌলবাদী জঙ্গীদের উত্থান হচ্ছে বলে বিলিয়ন ডলারের অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য অ্যাসল্ট রাইফেল কিনতে চাইলে আপত্তি জানায় ভারত। লালমনিরহাট এয়ারবেস নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে আসলেও ভারতের শত বাঁধার পরেও তার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
তুরস্কের কাছ থেকে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন এবং চীনের কাছ থেকে চতুর্থ প্রজন্মের ১৬টি জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশনকে তারা সবসময় প্রস্তুত করে রেখেছে যেনো কখনো বাংলাদেশে ইউক্রেন বা ইসরায়েলের মতো স্থলঅভিযান পরিচালনা করলে পূর্বাঞ্চলীয় ফেনীর বিলোনিয়া অথবা খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে সহজেই প্রবেশ করাতে পারে। বাংলাদেশ যেনো কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ভারতের সেনা সমাবেশের কোনো অগ্রিম তথ্য দিতে না পারে সেইজন্য বাংলাদেশের নিজস্ব ভৌগোলিক কক্ষপথ ৮৮° পূর্ব থেকে ৯২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করতে না দিয়ে তা ১১৯.০৯° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ সীমানায় করায়। পক্ষান্তরে রাশিয়া থেকে পাঁচটি অত্যাধুনিক এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনছে ভারত।