বৈধ পথে চোরাচালানি পণ্য দেশে প্রবেশ করিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমস সুপার আব্দুল গনি। তিনি প্রতিদিন ভারতীয় নাগরিকদের পাসপোর্টের মাধ্যেমে শাড়ি, থ্রি-পিছ, কসমেটিক্স, ঔষধ, জিরা, গরম মসলা, বিভিন্ন প্রকার তেল, মেয়াদ উত্তীর্ন খাদ্যদ্রব্য দেশে প্রবেশ করিয়ে ওই যাত্রীদের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতি ব্যাগে তিনি ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা নিয়ে শুল্ক ফাকি দিচ্ছে। আর ওই টাকা তার ব্যাক্তিগত পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর সুপার গনিকে সহযোগিতা করছে কিছু আনসার সদস্য ও এপিবিএন এর ওসি সন্তু।
নির্ভরযোগ্য সুত্র দাবি করে বলেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে সুপার গনি ও এআরও বদরুল ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রীদের দিয়ে ল্যাগেজ ব্যবসা জমজমাট করে তুলেছে বেনাপোল চেকপোষ্টে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাষ্ট্র। কারন ভারতীয় শাড়ি থ্রি-পিছ সহ অন্যান্য পণ্য পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যেমে দেশে প্রবেশ করে একদিকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি ও অন্যদিকে দেশের কলকারখানার উৎপাদিত পণ্য মার খাচ্ছে। এই অসাধু কর্মকর্তা প্রতিদিনই বেনাপোল চেকপোষ্ট থেকে শুধু মাত্র পাসপোর্ট যাত্রীদের অবৈধ পণ্য এনে একাই ৫/৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি প্রতিব্যাগে বা প্রতিটি পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়। এর মধ্যে ৬০% পায় সুপার গনি এবং বাকি ৪০% পায় অন্যান্য কাস্টমস কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আবার এই সুপারকে সহযোগিতা করে আনসার সিপাই বিল্লাল ও সুমন। এই সিপাইরা কাস্টমস এর আদেশ মত পাসপোর্ট যাত্রীদের ল্যাগেজ টানা হ্যাচড়া করে। আবার তারা নিজেরা দরদাম কষাকষি করে পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থেকে বেশী টাকা হাতিয়ে নিয়ে কাস্টম সুপারকে তার নির্ধারিত টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিজেদের পকেটস্থ করে। আর এই টাকার ভাগ আনসার এর পিসি (কাস্টমস সাইড) ও পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভারত থেকে আসা সে দেশের পাসপোর্ট যাত্রী শিউলি বলেন, আমরা প্রতিদিন আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। এরপর এসব পণ্য কাস্টমস স্কানিংয়ে দিয়ে এবং তাদের নির্ধারিত টাকা দিয়ে বের হই। বেনাপোল সহ যশোর খুলনা নওয়াপাড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় আমাদের এসব ভারতীয় পণ্য বিক্রি করে আবার দেশে চলে যাই। আমি যে ল্যাগেজ আনি তাতে কাস্টমসে দেওয়া লাগে ৫ হাজার টাকা। আর আমার চেয়ে যারা বড় ব্যাগ আনে তারা আরো বেশী টাকা দিয়ে পার হয়। ভারত থেকে প্রতিদিন শুধু মাত্র ভারতীয় এসব ল্যাগেজ ব্যবসায়ি ৫শত জন আসে।
বেনাপোল চেকপোষ্ট এর আমির হোসেন বলেন, ভারত থেকে যে পরিমান পণ্য পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যেমে আসে তাতে দেশে উৎপাদিত পণ্য মার খেয়ে যাবে। এছাড়া সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তিনি বলেন আমার কথা বিশ্বাস না হলে কাস্টমস বিজিবি এবং স্থল বন্দরের সিসি ক্যামেরা টেনে দেখলে বোঝা যাবে কি পরিমান লোক ভারতীয় পণ্য নিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। সেই সাথে আসছে মেয়াদউত্তীর্ন চকলেট সহ বিভিন্ন প্রসাধনী । যা ব্যবহার করে আমাদের দেশের মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। ভারতীয় ব্যবসায়িরা মেয়াদ উত্তীর্ন পণ্য সামগ্রীতে নতুন করে কাগজ ছাপিয়ে ল্যাবেল লাগিয়ে এদেশে নিয়ে আসে ।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগের তীর ছুড়েছে শুল্ক ফাকির সাথে আরো জড়িত রয়েছে এপিবি এন পুলিশের ইস্নপেক্টার সন্তু। সে কাস্টমস সুপার এর সহযোগিতায় প্রতিদিন ৩ টি করে ল্যাগেজ পার করে। এটা আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য কাস্টমস তাকে ফ্রি করে দিয়েছে তিনটি ল্যাগেজ। তাতে প্রতিদিন তার ওই ল্যাগেজ থেকে আয় হয় ১৫ হাজার টাকা। রাষ্ট্রের গুরুত্ব পুর্ণ দায়িত্বে বেনাপোল চেকপোষ্টের কাস্টমস ও এপিবিএন পুলিশ প্রকাশ্যে ল্যাগেজ পার্টি পার করে হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। এ বিষয় এলাকার সাধারন জনগন সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনি দুপুরবেলা সন্তু ও গনি দুজন একসাথে হোটেল থেকে খাবার এনে সুপার এর রুমে খায়। যদিও তাদের দায়িত্ব দুই জনের দুই জায়গায়।
ওদিকে সুপার গনির নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এ ধরনের কাজ করি না। আমাকে অযথা মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে । আমি কাস্টমস এর রুল মেনে এখানে দায়িত্ব পালন করি।