যশোরের শার্শায় আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা। আর এই চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছে ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারীদের আতঙ্কের একমাত্র নাম বিজিবি। শার্শা ও বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় গত কয়েকমাসে চোরাকারবারীদের বিভিন্ন পণ্য আটকের ক্ষেত্রে ৪৯ বিজিবিরই একমাত্র সাফল্য বিরাজমান রয়েছে।
গত ১৫ই মে থেকে ২৪ই মে পর্যন্ত ১০ দিনে ৪৯ বিজিবির টহলরত দল বেনাপোল,শাহজাদপুর, ঘিবা,ধান্যখোলা,পাঁচপীরতলা বিওপি এবং বেনাপোল আইসিপি ও আমড়াখালী চেকপোষ্ট সহ সীমান্ত এলাকায় মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ৪ কোটি ৯ লক্ষ টাকার অবৈধ মালামাল আটক করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭৮ লক্ষ টাকার যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রা ও হিরোইন আটক করতে সক্ষম হয়েছে। ৪৯ বিজিবির আওতাধীন যশোরের শার্শা ও চৌগাছা উপজেলার ৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় গত ১০ দিনে অভিযান পরিচালনা করে বিদেশী মদ, ভারতীয় ফেন্সিডিল, শাড়ী, কম্বল, থ্রি-পিস, চোখ চকলেট, বিভিন্ন প্রকার চকলেট, জিরা, কিসমিস, ফুসকা, কাজু বাদাম, পান মসলা, বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সামগ্রী কসমেটিক্স ভায়াগ্রা এবং হিরোইন আটক করতে সক্ষম হয়েছে। আটককৃত এসব মালামালের আনুমানিক মূূল্য ৪,০৯,৩৯,১৬৪/- (চার কোটি নয় লাখ ঊনচল্লিশ হাজার এক শত চৌষট্টি) টাকা।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়,মাদক বিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ই মে ৫,৬৮,৫৫০/-(পাঁচ লক্ষ আটষট্টি হাজার পাঁচশত পঞ্চাশ) টাকা, ১৬ই মে ৭,৫৪,৫৬০/-(সাত লক্ষ চুয়ান্ন হাজার পাঁচশত ষাট) টাকা, ১৭ই মে ৬৬,২৪,১০০/-(ছেষট্টি লক্ষ চব্বিশ হাজার একশত) টাকা, ১৮ই মে ১২,০০০০০/- (বার লক্ষ) টাকা, ১৯ই মে ২,০৭,৪২,৫২৫/-(দুই কোটি সাত লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার পাঁচশত পঁচিশ) টাকা, ২০ই মে ১০,৭২,৬৫৯/-(দশ লক্ষ বাহাত্তর হাজার ছয়শত ঊনষাট) টাকা, ২১ই মে ৪১,০৩,০১০/-(একচল্লিশ লক্ষ তিন হাজার দশ) টাকা, ২২ই মে ১৩,১০,৬৫০/-(তেরো লক্ষ দশ হাজার পঞ্চাশ) টাকা, ২৩ই মে ৪০,৯২,৫১০/-(চল্লশি লক্ষ বরিানব্বই হাজার পাঁচশত দশ) টাকা এবং ২৪ই মে ৪,৭০,৬০০/-(চার লক্ষ সত্তর হাজার ছয়শত) টাকা সর্বমোট আটককৃত এসব মালামালের আনুমানিক মূূল্য ৪০,৯,৩৯,১৬৪/- (চার কোটি নয় লাখ ঊনচল্লিশ হাজার এক শত চৌষট্টি) টাকা বলে জানা গেছে।
মালামাল আটকের বিষয়ে বেনাপোল আইসিপি (বিজিবি) ক্যাম্প কমান্ডার মিজানুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেনাপোল আইসিবি (বিজিবি) কর্তৃক গত ১৫ই মে থেকে ২৪ই মে পর্যন্ত ১০ দিনে অতিরিক্ত পণ্য বহনকরী পাসপোর্ট যাত্রী ও বেনাপোল সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ৪ কোটি ৯ লক্ষ টাকার হিরাইন, যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রা পাওডার সহ বিদেশী মদ, ফেন্সিডিল, শাড়ী, বিভিন্ন প্রকার চকলেট এবং কসমেটিক্স পন্য আটক করা হয়েছে। আইসিপি পাসপোর্ট যাত্রীদের পাসপোর্টের হিস্টরি বা যাওয়া আসার সিল যাচায় বাচায় করে অতিরিক্ত পণ্য আটক করেছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয়রা জানান, ৫ই আগষ্ট পরবর্তীতে শুধুমাত্র বিজিবি কর্তৃক বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য আটক হতে দেখা গেছে। অনান্য বাহিনীর তেমন কোন মাদক ও চোরাচালান বিরোধী সফলতা দেখা মেলেনি। তাছাড়া চোরাকারবারীরা শুধুমাত্র বিজিবিকে ভয় পায়।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী ও উপ অধিনায়ক মেজর ফারজিন
জানান, মাদক ও চোরাচালান নির্মূলে সীমান্তে বিজিবির কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান মালামালসহ পাচার চক্র আটকের নিমিত্তে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী গোয়েন্দা তৎপরতা ও আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে মাদকদ্রব্য এবং বিভিন্ন ধরনের চোরাচালানী মালামাল জব্দ করতে সক্ষম হচ্ছি। তিনি আরও জানান, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান অভিযানে কোটি কোটি টাকার পণ্য আটক হলেও বিজিবির উপস্থিতি দেখতে পেয়ে অধিকাংশ চোরকারবারী মালামাল ফেলে পালিয়ে যায়। এ কারনে চোরাচালান পণ্যের সাথে আসামি দেওয়া সম্ভব না হলেও তাদের শনাক্তের কাজ চলমান রয়েছে।