যশোরের বেনাপোল -শার্শা সীমান্তের কয়েকটি আমন ধানের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। ভারতীয় উজানের পানি সীমান্তের ইছামতি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় এবং সম্প্রতি টানা বৃষ্টির কারনে এ পরিস্থিতীতির সৃষ্টি হয়েছে।

 বেনাপোলের বালুন্ডা, দৌলতপুর, পুটখালী, রাজাপুর, গয়ড়া খলসী এবং শার্শার কায়বা,দাতখালী, রুদ্রপুর, গোগা, হরিষচন্দ্রপুর,  কন্যাদাহ, রামেরডাঙ্গা নারানতলা এলাকার হাজার হাজার একর ফসলী জমিতে পানিতে ডুবে যাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। এছাড়া দুই থানার প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার পানি বন্দী অবস্থায় আছে। এখনও সরকারী বেসরকারী ভাবে ওই সব পানি বন্ধী মানুষের মাঝে ত্রান পৌছায়নি। এছাড়া রাস্তাঘাট মাছের ঘের পুকুর ও আম বাগান লেবু বাগান কুল বাগানে পানি উঠে গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কয় আছে চাষীরা।

বুধবার  সকাল ১০ টায় শার্শা ও বেনাপোল সীমান্তের কায়বা গোগা পুটখালী উলাশী ইউনিয়ন এর মাঠ ঘুরে দেখা যায় ফসলী জমি সহ বাড়িতে পানি উঠে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার পানিতে দিশেহারা। ওই এলাকায়  এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভারতের উজানের পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ভারত বাংলাদেশের মাঝে ইছামতি নদী প্লাবিত হয়ে পানি উপচে পড়ছে এদেশের ফসলি ধানক্ষেতে। সেই সাথে কিছু বাড়ির মধ্যে হাটু পানি  এবং পাকা সড়কের উপর পানি এবং মাছের ঘের ভেসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ পুকুরে ও জমি কেটে এবং বাওড়ে মাছের চাষ করে থাকে। হঠাৎ একটানা বৃষ্টি এবং ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানি ইছামতি দিয়ে এসে এদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এসব জমির ধান প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

বেনাপোলের রাজাপুর গ্রামের ভ্যান চালক আছর আলী  জানায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারতীয় উজানের পানি বাংলাদেশে ইছামতি নদী দিয়ে প্রবেশ করে। এবার বৃষ্টিপাত বেশী হওয়ার কারনে কয়েকশত একর আমন ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে মাছের ঘের পুকুর বাওড় ও আখের ক্ষেত ও বিনষ্ট হয়েছে। আমার বাড়ি পানি উঠায় রাতে রাস্তার উপর ভ্যানের উপর ঘুমাচ্ছি। এছাড়া ভ্যানের মটরে চার্জ দিতে না পারায় আয় রোজগারও করতে পারছি না।

খলসী গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন  জানায়, একটানা বৃষ্টি ও ভারতের পানি দেশে পবেশ করে আমাদের চরম ক্ষতি হয়েছে। এই মাঠে আমরা চাষাবাদ করে থাকি। আমন ধান রোপন করেছিলাম। মাঠে শত শত কৃষকের আমন ধান ছিল কয়েকশত একর জমিতে । সব পানিতে তলিয়ে ন্ষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের এখন পথে বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় নাই।

কায়বা গ্রামের মাছ চাষী দিপঙ্কর সাহা বলেন , তার রুদ্রপুর মাঠে  রয়েছে মাছের ঘের। এই ঘের পানিতে ভেসে সব মাছ বেরিয়ে গেছে। এখানে আমার মত আরোও অনেকের এমন দশা হয়েছে। কিছু করার নাই। প্রকৃতির কাছে আমরা হারতে বাধ্য হয়েছি। একাধারে বৃষ্টি অন্যদিকে ভারতের পানি গড়িয়ে আমাদের জমিতে আসা সব মিলিয়ে এসব ঘের যেমন ভেসেছে তেমনি আবাদি ফসলি জমির ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
রাজাপুর গ্রামের শামিম হোসেন বলেন, পানি বাড়িতে উঠে রান্না বান্না বন্ধ থাকলেও সরকারী ভাবে কোন ত্রান পৌছায় নাই। এছাড়া বর্তমানে এলাকায় স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি না থাকার কারনে ও কেউ ত্রান সামগ্রী দিতে আসে নাই। এখানকার অনেক মানুষ মানবতার জীবন যাপন করছে। তারপর আবার কাজও নাই।

এছাড়া শার্শার গোগা, রামেরডাঙ্গা, কন্যাদাহ  এলাকায়ও ইছামতি নদীর উজানের পানিতে ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারী ও আওয়ালী বিল এলাকার হাজার একর  ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকায় মধ্যে গোগা শান্তিপুর বাইকোলা গাজীর পাড়ের কায়বা পাচকায়বা ভবানীপুর ও রুদ্রপুর ভবানীপুর ও রুদ্রপুর কৃষকরা জানায় ভারী বর্ষনে এবং ভারতীয় উজানের পানি ইছামতি নদী উপচে পড়ে প্লাবিত হয়েছে এসব ফসলি মাঠ।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাজিফ হাসন এর কাছে সরকারী ভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারী ভাবে শার্শা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে। পানি বন্দী মানুষ এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবে।
তিনি আরো বলেন কায়বা ইউনিয়ন এর দাদখালী রুদ্রপুর যে বাধ দিয়ে এখন ইছামতি নদীর পানি প্রবেশ করছে গতবছর ডিসেম্বরে স্থানীয় জনগন জলাবদ্ধ নিরসনের জন্য নিজেরাই বাধ কেটে দিয়েছিল । সেই কাটা বাধ দিয়েই আবার নদীর পানি খালে প্রবেশ করছে। এই উভয়মুখি সমস্যার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উপজেলা প্রশাসন ইতি মধ্যে দৃষ্টি আকর্ষন করেছে।