মা দিবসের প্রাক প্রস্তুতির সময়ে  ত্রিশাল উপজেলার রাহেলা-হযরত মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী তাইয়্যিবা তাবাসসুম তন্দ্রার ভুল অপারেশনে মৃত্যু হয়েছে বলে জানান  তার অভিভাবক।  তার অকাল প্রয়াণে এলাকাবাসী গভীরভাবে শোকাহত।

গত রাতে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বীররামপুর গফাকুড়ি মোড়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ গোলাপ মিয়ার ১২-১৩ বছর বয়সী কন্যাসন্তান, যে ছিল পরিবারের নয়নের মণি, একটি সাধারণ টনসিলের অপারেশন করাতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে না ফেরার দেশে চলে গেছে। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহ শহরের এপেক্স হসপিটালে। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছোট্ট মেয়েটি  টনসিলের সংক্রমণে ভুগছিল। এমতাবস্থায়, পরিবারের সদস্যরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এপেক্স হসপিটালের ডাক্তার কামিনী কুমার ত্রিপুরার কাছে নিয়ে যান। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, শিশুটিকে অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু কে জানত, অপারেশনের টেবিলেই অপেক্ষা করছিল এক ভয়ংকর পরিণতি।

নিহত শিশুর শোকাহত স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তার কামিনী কুমার ত্রিপুরার চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো ভুল অথবা ত্রুটিপূর্ণ অপারেশনের কারণেই এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। তাদের বুকফাটা আর্তনাদ এবং অভিযোগ, ভুল চিকিৎসার ফলেই তাদের আদরের মেয়ের শ্বাসনালি কেটে যায় এবং নিমিষেই একটি প্রাণবন্ত জীবন থেমে যায়।

এ আকস্মিক ও মর্মান্তিক সংবাদে বীররামপুর গ্রাম এবং গোলাপ মিয়ার পরিবারে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কন্যার অকালমৃত্যুতে দিশেহারা বাবা-মায়ের আহাজারি আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলেছে। চোখের সামনে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক শিশুর অপারেশনের টেবিলে এভাবে প্রাণ হারানো, এ দুঃসহ দৃশ্য তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতের স্বজনরা বলেন, "আমরা আমাদের মেয়েকে সুস্থ করার আশায় এ হাসপাতালে এনেছিলাম। আর এ ডাক্তাররাই আমাদের মেয়েকে মেরে ফেলল। এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটা স্পষ্টতই ডাক্তারের অবহেলা। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার চাই।" তাদের একটাই জোর দাবি, অবিলম্বে এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হোক এবং অভিযুক্ত ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

এ মর্মান্তিক ঘটনাটি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। একটি সাধারণ surgical প্রক্রিয়া কিভাবে একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন কেড়ে নিতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ এবং ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি কেবল একটি পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি নয়, এটি সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে। আমাদের সকলের প্রত্যাশা, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ অতি দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবে এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে। 

একইসাথে, ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো অমূল্য প্রাণ যেন এমন অমার্জনীয় অবহেলার শিকার না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে – এটাই এখন সকলের প্রাণের দাবি।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরম করুণাময় আল্লাহ্ যেন শোকসন্তপ্ত গোলাপ মিয়ার পরিবারকে এ গভীর শোক সহ্য করার শক্তি দান করেন এবং প্রয়াত শিশুর বিদেহী আত্মা শান্তি লাভ করে।