সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে দাঁড়িয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল, বিশেষ করে ভোলা জেলা। প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিশাল বিনিয়োগে এখানে গড়ে উঠতে যাচ্ছে 'ভোলা ইকো-ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক জোন', যা কেবল একটি শিল্পাঞ্চল নয়, লাখো স্বপ্ন পূরণের এক নতুন ঠিকানা। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পুরোপুরি চালু হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।


চীনা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ এই বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ইতোমধ্যে এই প্রকল্পকে প্রাথমিক অনুমোদন বা প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স প্রদান করেছে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বেজা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সুসংবাদটি নিশ্চিত করেছে।


ভোলার সদর উপজেলায় প্রায় ১০২.৪৬ একর সুবিশাল জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি তার যাত্রা শুরু করবে, যা পর্যায়ক্রমে ১৫৮ একরে সম্প্রসারিত হবে। লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, যাদের বাংলাদেশে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে সফল বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারাই এই মহাযজ্ঞের ডেভেলপার হিসেবে কাজ করবে।


বেজা জানিয়েছে, এটি হবে একটি পরিবেশবান্ধব, শ্রমঘন ও কৃষিভিত্তিক শিল্প এলাকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে প্রায় ৪০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো হয়ে আসবে।


বেজার নির্বাহী সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মেজর জেনারেল (অব.) মো. নজরুল ইসলাম এই উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, "বরিশাল বিভাগের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ভোলা ইকো-ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক জোন শিল্পায়নে এক বড় ভূমিকা রাখবে। কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক শিল্প বিকাশে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হবে।"


অঞ্চলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঝুয়াং লাইফেং তার স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করে বলেন, তারা একটি পরিবেশবান্ধব ও সার্কুলার ইকোনমিক জোন গড়ে তুলতে কাজ করছেন। তিনি ভোলায় গ্যাস ও কৃষিজ সম্পদের প্রাচুর্য কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে অত্যন্ত আশাবাদী এবং ইতোমধ্যে চীনা বিনিয়োগকারীরা এই প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলেও জানান।


লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সবসময়ই পরিবেশবান্ধব ও টেকসই শিল্পায়নে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, যা রপ্তানিমুখী উৎপাদনে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছে।


বেজা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, ভোলা ইকো-ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক জোন বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। এটি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং বাংলাদেশকে টেকসই শিল্পোন্নয়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বর্তমানে বেজা মোট ১৩টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে লাইসেন্স দিয়েছে, যার মধ্যে ভোলা ইকো-ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক জোন এক উজ্জ্বল সংযোজন।


এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভোলার মাটিতে কেবল ইটের পর ইট নয়, গড়ে উঠবে অজস্র মানুষের স্বপ্ন, সমৃদ্ধি আর এক নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।